শোক দিবসে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ তুলে করা ছাত্রলীগের দাবির প্রেক্ষিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফকে তার কার্যালয়ে প্রবেশে করতে দেয়নি শিক্ষকরা।

 

একই দিন মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

 

রোববার সকালে নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় তাকে বাধা দেন শিক্ষকরা।

এদিকে ঐ শিক্ষককের বাধ্যতামূলক ছুটিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে উপাচার্য বরারর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যাহারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ১২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে জানাতে বলা হয়েছে।

 

জানা যায়, শোক দিবসে ক্লাস নিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহারের দাবিতে সকাল ৯টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।

 

এর ঘণ্টা খানিক পর উপাচার্য তার কার্যালয়ে আসলে প্রশাসানিক ভবনের নিচ তলায় তাকে বাধা দেয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতি।

 

শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা উপাচার্যের কাছে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এসময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় উপচার্য কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে বাধা দেয় শিক্ষক সমিতি। পরে দিনভর উপাচার্য ও শিক্ষক নেতাদের প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় অবস্থান করতে দেখা যায়।

 

এসময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. খলিলুর রহমান আন্দোলনরত শিক্ষকদের উদ্দেশে বিভিন্ন কটূক্তিমূলক বাক্য প্রয়োগ এবং শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

 

যতদিন তাদের শিক্ষক ক্লাসে না আসবেন ততদিন শিক্ষার্থীরাও ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেবেন না বলেও জানায় তারা।

এদিকে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষক সমিতি এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপাচার্য।

আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আইনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা আশা করি ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে।

 

উপাচার্য বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে আশা করি ইতিবাচক কিছুই হবে।’

এদিকে ওই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহারে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও উপাচার্যকে ১২ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়ে আইনি নোটিশ করেছে মাহবুবুল হকের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

 

আইনি নোটিশ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, এই নোটিশ আমি এখনও পাইনি।

এদিকে গত ১৭ আগস্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান উপাচার্য ও প্রক্টরের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরারবর অভিযোগ করেন ওই শিক্ষক। অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষককে অন্যায়ভাবে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর প্রতিবাদ করায় উপাচার্য তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

 

একই সময়ে প্রক্টর ড. কাজী মো. কামাল উদ্দিন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। অভিযোগপত্রটি রেজিস্ট্রারের দফতরে এসেছে বলে জানায় রেজিস্ট্রার।সূত্রঃ যুগান্তর

 


Comments