ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি হলের প্রাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। বুধবার দুপুর থেকেই শোনা যাচ্ছিল এ ধরনের গুঞ্জন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ লংঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ ও শিক্ষামন্ত্রীর মিথ্যাচারের প্রতিবাদে ওই শিক্ষকরা পদত্যাগ করেন বলে শোনা যায়।

 

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি কোনো পদত্যাগপত্র পাননি।

এছাড়া কয়েক ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও প্রাধ্যক্ষদের বক্তব্যে। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।


এ বিষয়ে নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, 'আমি কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

অন্যদিকে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড.আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'গত ৪ তারিখ তারা আমার কাছে অব্যাহতি চেয়েছেন। তারা বলেছেন, কাজ করতে তারা আগ্রহী নন।

যেভাবে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হলো তা ১৯৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের লঙ্ঘন এবং শিক্ষামন্ত্রীর দ্বৈতাচারের প্রতিবাদে তারা আর কাজ করতে আগ্রহী নন বলে জানান। পরবর্তী সময়ে আমি তাদের বলেছি অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করা হবে না। আপনারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বার্থে কাজ চালিয়ে যাবেন।’

 

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের দাবি, 'প্রায় সবকটি হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর জানিয়েছেন, তারা কাজ করতে আগ্রহী নন।’

তিনি বলেন, 'ঘটনাটি যেহেতু ৪ সেপ্টেম্বরের তাই অনেকেই ছুটিতে ছিলেন। ফলে কেউ কেউ যোগাযোগ করতে পারেননি। অনেকে আবার টেলিফোনে বলেছেন যে, তারা কাজ করতে আগ্রহী নন। কিন্তু যারা যোগাযোগ করতে পেরেছেন তাদের সবাই বলেছেন কাজ করতে আগ্রহী নন।’

তবে কতটি হলের প্রাধ্যক্ষরা অব্যাহতি চেয়েছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

 

এদিকে এই ঘটনা নিয়ে ১২টি হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে গণমাধ্যম। তার মধ্যে ৭ জনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের একাধিকবার পরিচয় পাঠিয়ে ফোন দেয়া হলেও তারা তা রিসিভ করেননি।

যোগাযোগ করা হয়েছে এমন ৭ প্রাধ্যক্ষের মধ্যে ৪ জনই যুগান্তরকে জানান, তারা কোনো পদত্যাগপত্র দেননি।

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি ১ জন এবং পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বলে জানান ২ জন।


এদের মধ্যে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম সরকার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকিয়া পারভীন, সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, তারা কোনো পদত্যাগপত্র বা অব্যাহতিপত্র দেননি এবং দেবেনও না।

বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.এ জেড এম শফিউল আলম ভূঁইয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান ও রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন জানান তারা অব্যাহতি চেয়েছেন।

একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও কল রিসিভ করেননি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, কবি জসীম উদ্দীন হল, কবি সুফিয়া কামাল হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড.এম আমজাদ আলী।


পদত্যাগপত্র দেননি এমন প্রাধ্যক্ষরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বর্তমান উপাচার্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই তারা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখিয়ে উপাচার্য নিয়োগের সম্পূর্ণ পক্ষে।

 

পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এমন প্রাধ্যক্ষরা জানান, নতুন উপাচার্য নিয়োগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর আঘাত। তাই তারা অব্যাহতি চেয়েছেন।

 

তবে উপাচার্য অব্যাহতি দেয়ার তারিখ হিসেবে ৪ সেপ্টেম্বরকে উল্লেখ করলেও পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এমন প্রাধ্যক্ষদের একজন জানান, ৫ সেপ্টেম্বর অব্যাহতিপত্র জমা দেয়া হয়েছে। কতজন অব্যাহতি চেয়েছেন এ বিষয়েও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি তারা।

 

একজন জানান, তিনি নিজে গিয়ে অব্যাহতি চাননি। তবে এ বিষয়ে তারা এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, সোমবার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো.আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে অধ্যাপক ড.আখতারুজ্জামানকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেন।

গত ২৪ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হয়।

 

সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট তিনি চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন।

তার আগে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি তাকে সম্পূর্ণ অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি নির্বাচন ছাড়াই সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। যুগান্তর

 


Comments