ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়েছে ঈদের আগে। সেই বিপর্যয় এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি রেলওয়ে। ঈদের পরেও ঢাকামুখি যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এর সাথে অনিয়মতো আছেই।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেসের এক যাত্রীকে এসি কোচে (ড-৬৫১২) ছাতা নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। এসি কোচের ওই আসনের আশপাশে উপর থেকে পানি পড়ছিল বলে বাধ্য হয়ে ওই যাত্রী ছাতা মাথায় দিয়ে বসেন।
রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সবগুলো ট্রেন চলছে বিলম্বে। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের ট্র্রেনের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিটি ট্রেন চলছে ২/৩ ঘণ্টা বিলম্বে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা থেকে রংপুরগামী ‘রংপরু এক্সপ্রেস’ চলেছে প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে। অথচ আগের দিন রোববার ছিল এই ট্রেনের বিরতি। বিরতির পরদিন থেকে সাধারণত ট্রেনগুলো সঠিক সময়ে চলাচল শুরু করে। কিন্তু বিরতির পরদিন গত সোমবার ঢাকা থেকে ট্রেনটি ছাড়ে ৩৬ মিনিট দেরিতে।
এদিকে, গতকাল ঢাকা থেকে চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস চলছে ৩ ঘণ্টা, খুলনা থেকে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা, দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী দ্রæতযান এক্সপ্রেস প্রায় ৪ ঘণ্টা, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ৪৫ মিনিট, লালমনিরহাট থেকে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ৪৫ মিনিট, খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের আগে থেকে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়। ঢাকা থেকে যাত্রীবোঝাই প্রতিটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের অনেক দেরিতে চলাচল করে। বিশেষ করে ঈদের দুদিন আগে দিনাজপুরগামী দ্রæতযান এক্সপ্রেস তিন ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে আবার এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে।
ওই ট্রেনের যাত্রীদের অভিযোগ, রেলের একজন কর্মকর্তার স্ত্রী ছাড়া পরায় ট্রেনটি বিমান বন্দরে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। তবে এ বিষয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। ঈদের একদিন আগে ট্রেনের অবস্থা আরও খারাপ হয়। ঘরমুখি যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তবেই ট্রেনের দেখা পান।
ঈদের পর ১০দিন কেটে গেলেও সে অবস্থা এখনও কাটেনি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো সিডিউল কোনোভাবেই ঠিক করা যাচ্ছে না। এজন্য কেউ কেউ কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারনে দেরিতে চলাচল করছে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ট্রেনটির কোচ ঘন ঘন ড্যামেজ হচ্ছে। এতে করে সময়মতো ছাড়তে পারছে না ট্রেনটি। গতকাল মঙ্গলবারও ট্রেনটি চলাচল করেছে সাড়ে ৩ ঘণ্টা দেরিতে।
ওই ট্রেনের এক যাত্রী জানান, তিনি এসি চেয়ারের টিকিট কেটে ড-৬৫১২ নং কোচে উঠেছেন। ওই কোচের ছাদ থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেশিনের পানি পড়ে। এতে করে কয়েকটি আসনে কোনো যাত্রীই বসতে পারেনি। এক যাত্রী বাধ্য হয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে বসেন।
আরেক যাত্রী এসি কোচে যাত্রীর ছাতা মাথায় দেয়ার ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন এই প্রতিবেদকের কাছে। ছাতা মাথায় দেয়া যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি আরামে যাবো বলে। কিন্তু এসির পানি আমার সেই আরাম ‘হারাম’ করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে ছাতা মাথায় দিয়েছি। এটা যেমন যন্ত্রনাদায়ক তেমনি লজ্জাকর বিষয়ও বটে। কর্তৃপক্ষ এগুলো দেখে না কেন?
জানতে চাইলে রেলওয়ের একজন প্রকৌশলী বলেন, রংপুর এক্সপ্রেসের কোচগুলো প্রায়ই ড্যামেজ হচ্ছে একথা সত্য। তবে আমরা মেরামতও করছি। এখন ইলেকট্রিক্যাল সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি জানান, ঈদের সময় কোচগুলো মেরামত করা হয়েছিল জরুরী ভিত্তিতে। সে কারনে কিছু সমস্যা থেকেই গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। দিনাজপুরগামী যাত্রী বিশ্বজিৎ ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, কমলাপুর স্টেশনে প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য যে বিশ্রামাগার আছে তা সব সময় নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকে।
বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ারও নেই। আবার শোভন চেয়ারের যাত্রীরা চেয়ারগুলো দখল করে রাখায় প্রথম শ্রেণির যাত্রীরা বসার সুযোগ পায় না। যাত্রীদের এসব অভিযোগ ছাড়াও বিনা টিকিটে যাত্রী ওঠা, নির্ধারিত আসনে বিনা টিকিটের যাত্রী বসানোসহ বিস্তর অভিযোগতো আছেই।
এসব প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে রেলওয়ের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কোনো বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, সিডিউল ঠিক হতে আরও সময় লাগবে। রংপুর এক্সপ্রেস নিয়ে ওই কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বার বার কেনো কোচ ড্যামেজ হচ্ছে তা নিয়ে আমরাও ভাবছি।