চাকরির ধরন অনুযায়ী সিভির বিন্যাসটাকে অদলবদল করে পাঠান। যদি কোনো এক্সট্রা-কারিক্যুলাম অ্যাক্টিভিটির (খেলাধুলো, নাটক, সামাজিক কাজকর্ম ইত্যাদি) সঙ্গে যুক্ত থাকেন তা হলে সেটা লেখার মধ্যে জায়গা অনুসারে উল্লেখ করুন
চাকরি পাওয়ার আগে বেশ কিছু ফাইন টিউনিংয়ের প্রয়োজন হয়।
সঠিকভাবে টিউনিং সেট করতে পারলে চাকরি নামক সোনার হরিণটি খুব সহজেই ধরা দেয়। এ জন্য দুটি কাজ জরুরি— এক. নিজেকে অবশ্যই যাচাই করা। দুই. চাকরির বাজারটাকেও খুব ভালোভাবে যাচাই করা।
আপনি নিজে : নিজের সামর্থ্য এবং দুর্বলতাগুলো যাচাই করে নিন। দেখে নিন কোন ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা রয়েছে, কী কাজ করতে আগ্রহী, স্কুল-কলেজে বা অন্য জায়গায় সাফল্যের সঙ্গে কী কাজ সম্পন্ন করেছিলেন ইত্যাদি। এবার খুঁজে দেখেন কোথায় কোথায় দুর্বলতা।
চাকরির বাজার : খোঁজ নিন, বাজারে কী ধরনের চাকরি পাওয়া যাচ্ছে; আপনার যোগ্যতা অনুসারে কী ধরনের চাকরি পেতে পারেন। যদি পছন্দমতো এক বা একাধিক সংস্থা বেছে নিতে পারেন, তা হলে সেই সংস্থাগুলো সম্পর্কে আগেভাগেই খোঁজখবর নিন।
সিভি : এবার নিজের একটা ভালো সি ভি বা রেজিউম তৈরি করুন। আপনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে নিয়োগকর্তা আপনাকে জানবেন এই সিভির মাধ্যমেই। তাই সি ভি বা রেজিউমটি খুব যত্ন সহকারে বানানো উচিত। একটা কথা মনে রাখা জরুরি, যিনি সদ্য গ্রাজুয়েট চাকরি খুঁজছেন আর যিনি কয়েক বছর চাকরির পর অন্য চাকরির খোঁজ করছেন, তাদের দুজনের সি ভি একটু আলাদা হবেই। যদিও মূল কাঠামো একই থাকবে।
কীভাবে নিজের ভালো একটা সিভি তৈরি করবেন তার কিছু পরামর্শ : ১. রেজিউম হওয়া উচিত নির্ভুল, বাড়তি কথা এখানে চলবে না। নিজের রেজিউম নিজে লিখবেন, কোনো বন্ধু থেকে কপি-পেস্ট বা গুগল থেকে নমুনা সিভি ডাউনলোড করে তৈরি করবেন না। সিভিটি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে সেটা এক ঝলকেই নিয়োগকারীর চোখে পড়ে। ২. যারা প্রথমবার সিভি জমা দিচ্ছেন, যদি কোনো প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বা ইন্টার্নশিপ করে থাকেন, সেটা সিভিতে অবশ্যই উল্লেখ করুন। এসব কাজে আপনার সাফল্যের কথাও সংক্ষেপে গুছিয়ে লিখতে হবে।
৩. ফ্রেশার হিসেবে যখন ক্যারিয়ার অবজেকটিভ স্টেটমেন্ট লিখছেন তখন আগামী পাঁচ বছর আপনি কী করবেন, নিজেকে কতটা পরিশীলিত করবেন বা কী ধরনের প্রোজেক্ট বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করবেন, সেটা উল্লেখ করুন। তাই বলে, ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার হতে চাই’— এমন সব উদ্ভট কথা লেখা উচিত হবে না। ৪. একই সিভি সব জায়গায় পাঠাবেন না। কোম্পানি এবং চাকরির ধরন অনুযায়ী সিভির বিন্যাসটাকে প্রয়োজন মাফিক অদলবদল করে পাঠান। যদি কোনো এক্সট্রা-কারিক্যুলাম অ্যাক্টিভিটির (খেলাধুলা, নাটক, সামাজিক কাজকর্ম ইত্যাদি) সঙ্গে যুক্ত থাকেন তা হলে সেটা লেখার মধ্যে জায়গা অনুসারে উল্লেখ করুন। জেনে রাখা ভালো, লেখালেখিও কিন্তু এক ধরনের এক্সট্রা অ্যাক্টিভিটি।
এবার ইন্টারভিউ : এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো এখানে যা আলোচনা করছি তা সবই তাদের জন্য যারা প্রথম চাকরির খোঁজ করছেন। কিছু বিশেষ পরামর্শ—
১. ‘নিজের সম্বন্ধে আরও কিছু বলুন’— ইন্টারভিউ বোর্ডে এ প্রশ্নটা হরহামেশাই করা হয়। এই প্রথম প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এর সঠিক উত্তরই ইন্টারভিউটা এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তাই পরিবারের কথায় বেশি সময় নষ্ট করবেন না। কতটা পরিশ্রমী, সৎ বা আন্তরিক, সেটাও বলার দরকার নেই। কারণ সিভিতেই তো লেখা রয়েছে। বরং নিজের দক্ষতা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক কথা বলার চেষ্টা করুন।
২. এর পরের প্রশ্নেই আপনাকে ইন্টারভিউয়ার জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘আজ থেকে পাঁচ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?’ এর উত্তর হতে পারে, ‘আমি চাই, এ সময়ের মধ্যে আমি কাজের পারফরমেন্সের মাধ্যমে ক্রমশ উন্নতি করতে এবং আমি এই সংস্থায় যে উদ্দেশ্য নিয়ে এগোব সেই লক্ষ্যে যেন আমরা পৌঁছতে পারি। ’ যতটা পারুন, কম কথায় বক্তব্য পেশ করার চেষ্টা করুন।
৩. ইন্টারভিউর একেবারে শেষ পর্যায়ে নিয়োগকর্তা আপনাকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে পারেন। এই সব ক্ষেত্রে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে চলতে হয়। যদি দেখেন তেমন কোনো প্রশ্ন করার নেই তা হলে প্রশ্ন করার দরকার নেই। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তা হলে সেটা সোজাসুজি করুন। তবে কোনো বিতর্কিত প্রশ্ন করতে যাবেন না। যেমন, ‘আমার কস্ট টু কোম্পানি কী হতে পারে বা আমি কী এ কাজের জন্য বিবেচিত হয়েছি বা হব?’