সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি দেদারছে অস্ত্র কিনছে মিয়ানমার। চীন, ইসরায়েল, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইউক্রেন, সার্বিয়া, উত্তর কোরিয়া, সাবেক যুগস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, বেলারুশ, জার্মানি, পোল্যান্ড, সুইজ্যারল্যান্ড, ডেনমার্ক সহ বিভিন্ন দেশ থেকে যুদ্ধ বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধজাহাজ, ট্যাংক, অত্যাধুনিক কামান সহ প্রচুর গোলাবারুদ ক্রয় অব্যাহত রেখেছে দেশটি।
ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রন করছে ও একক কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে।
২০১৫ সালে নির্বাচনে অং সাং সুচির ভূমিধস বিজয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করলেও দেশটির অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে মিয়ানমার শাসিত হয়ে আসছে সেনাবাহিনীর নিষ্পেষণ ও যাঁতাকলের মধ্যে দিয়ে। তবে ৯০ দশকের শুরুতে মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সীমিত পর্যায়ের কিছু অবরোধ নেমে আসে।
কিন্তু সুচি স্টেট কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর এসব অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দেশটিতে বিনিয়োগের জন্যে আগ্রহী হয়ে ওঠে ভারত থেকে শুরু করে চীন, রাশিয়া সহ পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু রোহিঙ্গা থেকে শুরু করে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযান দেশটিকে এখন পুরো এশিয়ার নিরাপত্তার জন্যে হুমকির সূতিগারে পরিণত করেছে। ভারত ইতিমধ্যে দাবি করছে আল-কায়েদা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিরা মার খাওয়ার পর এখন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের সুযোগ নিতে পারে।
মিয়ানমারের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ১৪২০ মার্কিন ডলার। অথচ শিক্ষার হার ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ শিক্ষার হার বেশি থাকলেও তা মেধা ও মননে ব্যবহৃত হয়নি সামরিক দিক থেকে দেশটির শক্তিশালী হয়ে ওঠার লক্ষ্যমাত্রার কারণে।
এজন্যে উন্নয়ন না হলেও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর হত্যাযজ্ঞে বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটি মেতে উঠেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আকাশ সীমা একাধিকবার লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার।
২০১২ সালে মিয়ানমারে তথাকথিত গণতান্ত্রিক রুপান্তর ঘটলেও দেশটির ওপর অবরোধ তুলে নেওয়া হলেও অস্ত্র ক্রয়ে এখনো ইইউ’এর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর অস্ত্র কিনছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের পাশে রয়েছে বাংলদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে জাতিসংঘে তার দেওয়া ভাষণে বলেছেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়। মিয়ানমারের অন্য প্রতিবেশি দেশ ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওসের সঙ্গে দেশটির চমৎকার সম্পর্ক। তাহলে মিয়ানমার এত অস্ত্র দিয়ে কি করবে?
ইতিমধ্যে দেশটি নিজদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে কি আচরণ করছে তা বিশ্ববাসী দেখেছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী অভিহিত করে তাদের ওপর হত্যাযজজ্ঞ ও জাতিগত নিধন চালানোর পর যে সব দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সেসব দেশওকি অদূর ভবিষ্যতে মিয়ামারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে যাচ্ছে?
মিয়ানমার যেসব অস্ত্র কিনছে তার সিংহভাগ যোগানদাতা দেশ হচ্ছে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইউক্রেন ও ইসরায়েল। ইতিমধ্যে ইসরায়েল বলেছে, রোহিঙ্গাদের গণহত্যা সত্ত্বেও দেশটি মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখবে। ৯০এর দশক থেকে ব্যাপকভাবে অস্ত্র ক্রয় শুরু করে মিয়ানমার যা এই প্রতিবেদনের ছবিতে দেখানো হয়েছে।
মিয়ানমারের কেনা সিংহভাগ যুদ্ধবিমান, সশস্ত্র যান, বন্দুক, যুদ্ধ জাহাজ এসেছে চীন থেকে। ভূমি থেকে আকাশে ছোড়ার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে রাশিয়া।
কিছুদিন আগে ইসরায়েল শতাধিক ট্যাংক, নৌযান, হালকা অস্ত্র সরবরাহ করেছে মিয়ানমারকে। ইসরায়েলের প্রশিক্ষণ পাচ্ছে মিয়ানমারের সেনারা। এমনকি পাকিস্তানের কাছ থেকেও যুদ্ধ বিমান কিনেছে দেশটি। -জাজিরা (ঈষৎ পরিবর্তিত)