নবীগণ ছিলেন মহান আল্লাহর পূত পবিত্র দূত। তাঁরা দিকভ্রান্ত মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। বলে দিয়েছেন অনন্ত জান্নাতের পথ।
জান্নাতের নিয়ামত অসীম। মানুষ যা কল্পনাও করতে পারবে না তার চেয়ে ঢের নিয়ামত সেখানে। মহান আল্লাহর এসব নবীগণ তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী উম্মতের মাঝে দ্বীনের কাজ করেছেন।
অবশেষে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখানে গবেষণা ও অনুসন্ধান অনুযায়ী পৃথিবীতে পাওয়া নবীদের কবরের ছবি উল্লেখ করা হলো।
০১. হযরত আদম (আ.) এর কবর
হযরত আদম (আ.)। এ পৃথিবীর প্রথম মানব। প্রথম নবী। হযরত আদম (আ.) এর কবরের অবস্থান সম্পর্কে অসংখ্য কাহিনী আছে। হযরত আদম (আ.) এর পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। শ্রীলংকার পর্বতের শীর্ষে ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি পায়ের ছাপ আছে। হযরত আদম (আ.) এর কবর জর্ডানে।
০২. হযরত ইদ্রিস (আ.) এর কবর
হযরত ইদ্রিস (আ.) কে খ্রিস্টানরাও নবী হিসেবে মানে। তিনি হযরত আদম (আ.) এর ৫ম প্রজন্মে ছিলেন। হযরত ইদ্রিস (আ.) ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পোশাক সীলমোহর করতেন এবং তিনি তাঁর লোকেদের সেলাই এবং সেলাই করা শিখিয়েছেন। তিনিই ছিলেন যিনি দীর্ঘ রোজা পালন করতেন। হযরত নূহ (আ.) হযরত ইদ্রিস (আ.) এর প্রজন্মের ছিলেন।হযরত ইদ্রিস (আ.) সমাধি বা কবরস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন দাবি রয়েছে। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে নবী ইদ্রিস (আ.) কায়রোর কাছে গিজার প্লেটোর উপর বড় পিরামিডের সমাহিত হয়েছেন। আরেকটি দাবি হল যে এটি ইরানের কিরকুতে অবস্থিত বাগদাদের শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আল্লাহ সর্বোত্তম জানেন।
০৩. হযরত নূহ (আ.) এর কবর
হযরত নূহ (আ.) কে আদমে ছানি নামেও পরিচিত ছিলেন। কারণ তাঁর সময় সারা পৃথিবী বন্যা প্লাবিত হয়। হযরত নূহ (আ.) তাঁর ৪০ জন সঙ্গীসহ কিশতিতে ছিলেন ওই মহা প্লাবনে।হযরত নূহ (আ.) এর কবর নিয়ে বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। লেবানন, জর্ডান, ইরাক এবং তুরস্কের কোথাও অবস্থান রয়েছে বলে উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন।
০৪. হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কবর
হযরত ইব্রাহিম (আ.) খলিলুল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু) নামেও পরিচিত ছিলেন। হযরত ইব্রাহিম আ. কে ইসরায়েলে দাফন করা হয়।
০৫. হযরত আইয়ুব (আ.) এর কবর
হযরত আইয়ুব (আ.) তাঁর ধৈর্য্যের জন্য সুপরিচিত। তাঁর অপার ধৈর্য্য ক্ষমতার বর্ণনা পবিত্র কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে। খ্রিস্টানরাও তাকে নবী হিসাবে অনুসরণ করে।হযরত আইয়ুব (আ.) এর কবরটি ওমানের সালালাহ শহরের ধোফর অঞ্চলের পাহাড়ে অবস্থিত বলে জানা গেছে। আরেক বর্ণনা অনুযায়ী হযরত আইয়ুব (আ.) এর মরদেহ তুরস্কের উর্ফায় অবস্থিত। দুরেজ সম্প্রদায় দাবি করে লেবাননের চুফ জেলায় অবস্থিত।
০৬. হযরত মুসা (আ.) এর কবর
ইহুদি, খ্রিস্ট, এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত রাসুল বা প্রেরিত পুরুষ। কোরআনে মুসা (আঃ) নাম অন্য নবীদের তুলনায় বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় যে মুসা (আঃ) ১২০ বছর বেঁচে ছিলেন। হযরত মুসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের নাম ছিল বনী-ইসরাঈল। তার মু’জেযাসমূহ বিগত অন্যান্য নবী-রসূলগণের তুলনায় যেমন সংখ্যায় বেশী, তেমনিভাবে প্রকাশের বলিষ্ঠতার দিক দিয়েও অধিক। এমনিভাবে তাঁর সম্প্রদায় বনী-ইসরাঈলের মূর্খতা এবং হঠকারিতাও বিগত উম্মত বা জাতিসমূহের তুলনায় বেশী কঠিন।তিনি হযরত শোয়েব (আ.) এর যুগে ছিলেন। হযরত শোয়েব (আ.) এর মেয়েকে বিয়ে করেন। আট বছর মেষ দেখাশোনা করার শর্তে বিবাহ করেন। হযরত মূসা (আ.)-র কবর সম্পর্কে বিভিন্ন দাবি আছে। কিন্তু বেশীরভাগ প-িতরা এই দাবি করেন যে, হযরত মূসা (আ.) এর কবর ইসরাইলের মধ্যে রয়েছে।
০৭. হযরত হারুন (আ.) এর কবর
হযরত হারুন (আ.) ছিলেন হযরত মূসা (আ.) -এর ভাই। ফেরাউনকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দুয়া করেন তাঁর ভাই হারুন (আ.) কে নবুওয়াত দেয়ার জন্য। হযরত মূসা (আ.) এর কথায় জড়তা ছিল। হযরত হারুন (আ.) এর কবর পেট্রা, জর্ডানের কাছে অবস্থিত।
০৮. হযরত সুলাইমান (আ.) এর কবর
হযরত সুলাইমান (আ.) পুরো বিশ্বের বাদশাহ ছিলেন। তিনি হযরত দাউদ (আ.) এর পুত্র ছিলেন। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তিনি একটি আংটি পরেন যার উপর ‘(ইসমা-আ-আজম) আল্লাহর মহান নাম লেখা ছিল’। মহান আল্লাহ তাকে অনেক অলৌকিক গুণ দান করেছেন। তিনি পাখি এবং প্রাণীদের ভাষা বুঝতে পারতেন। পশু-পাখিদের সাথে কথা বলতে পারতেন। এবং জিনরা তার দাস ছিল।সুলাইমান (আ.) এর ডান পাশে মানুষ এবং তার বাম পাশে জিনরা সবসময় তার পাশ থেকে নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতো।
০৯. হযরত উযাইর (আ.) এর কবর
হযরত উযাইর (আ.) এর জীবনের উপর ঘটে অলৌকিক ঘটনা। তিনি হযরত সুলাইমান (আ.) এর পরে বনী ইসরাঈলের কাছে এসেছিলেন। হযরত উযাইর (আ.) এর জীবনে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাটি হলো, মহান আল্লাহ তাকে ১০০ বছর পর্যন্ত মৃত্যু দান করেছেন। তারপর তাকে মৃত অবস্থা থেকে জীবিত করেছেন। অথচ তিনি মনে করেছিলেন যে, এটি কেবলমাত্র একটি দিনই ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাকে বলেছিলেন যে ১০০ বছর চলে গেছে। তিনি তার পানীয় এবং খাদ্য দেখতে পারেন একই অবস্থায়। সুতরাং আল্লাহ তাকে দেখিয়েছেন কিভাবে তিনি মৃত্যুর পরও জীবন দিতে পারেন। হযরত উযাইর (আ.) এর কবর ইরাকে।
১০. নবী হুদ (আ.) এর কবর
হযরত হুদ (আ.) অভিশপ্ত ‘আদ’ সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এই মানুষগুলি তাদের প্রচ- শক্তি এবং আকারের জন্য সূরম্ভ ভবনগুলি নির্মাণের জন্য স্বতন্ত্রভাবে পরিচিত ছিল। তাঁর উম্মতের অধিকাংশই তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। তাদেরকে শক্তিশালী বায়ু দ্বারা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। হযরত হুদ (আ.) এর কবর হাদরামাউত, ইয়েমেনে অবস্থিত।
১১. হযরত জাকারিয়া (আ.) এর কবর
হযরত জাকারিয়া (আ.) ইসলামের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। হযরত জাকারিয়া (আ.) এর কবর সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত।
১২. নবী ইয়াহিয়া (আ.) এর কবর
তিনি হযরত জাকারিয়া (আ.) এর পুত্র ছিলেন। তাকে তৎকালীন শাসক হেরোদালিসের আদেশে শহীদ করা হয়। নবী ইয়াহিয়া (আ.) সে সময়ে মাত্র ৩০ বছর বয়সী ছিলেন। তাঁর মায়ের চাচাতো বোন মরিয়ম (আ.) এর পুত্র। হযরত ঈসা (আ.) তখন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তার মিশন তখনো শুরু হয়নি।
১৩. হযরত ইমরান (আ.) এর কবর
হযরত ইমরান (আ.) ছিলেন হযরত ঈসা (আ.) এর মা হযরত মারিয়াম (আ.) এর পিতা। তিনি হযরত মারিয়াম (আ.) এর জন্মের পূর্বেই ইন্তেকাল করেন। হযরত ইমরান (আ.) এর কবর সালালাহ, ধাফোর, ওমান। সূত্র : দ্য ইসলাম অনলাইন