ছুটি কাটিয়ে এসে আবার এক মাসের ছুটি নেয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গণে নানা ধরনের বিতর্কের পর এবার খবর হলো- ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিদেশ চলে যাচ্ছেন এবং যাওয়ার আগে তিনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।’
চিকিৎসার জন্য তিনি কানাডা বা অস্ট্রেলিয়া যেতে পারেন। এ লক্ষ্যে ভিসা গ্রহণের প্রক্রিয়া দু’একদিনের মধ্যে শুরু হবে। বুধবার সচিবালয়ে দিনভর এ সংক্রান্ত গুজব নিয়ে নানা আলোচনা শোনা গেছে।
এদিকে নতুন করে এক মাসের ছুটিতে গিয়ে রাজধানীর কাকরাইলের হেয়ার রোডের বাসভবনেই অবস্থান করছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। বাসায় অবস্থান করলেও তার সঙ্গে কারো দেখা করার অনুমতি মেলেনি। বাসভবনের প্রধান ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এক মাসের ছুটি শেষে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার আবার এক মাসের ছুটিতে গেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ বিষয় নিয়ে সরকার ও সংসদের বাইরে থাকা বিরোধীদল বিএনপি’র মধ্যে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি প্রদর্শণ চলছে।
বুধবার নানা সূত্রে শোনা গুজব অনুসারে, ‘অসুস্থতার কারণে’ প্রধান বিচারপতি তার মেয়াদের আগেই অবসরে যেতে পারেন। এই ছুটির মধ্যেই পদত্যাগও করতে পারেন তিনি।
কয়েকটি সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, শরীরের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি আর দায়িত্বে পালনে সক্ষম নন। তাই ছুটির মধ্যেই তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠাতে পারেন।তিনি কন্যাদের কারও কাছে চলে যাওয়ারও ইচ্ছা পোষণ করেন। তার দুই মেয়ের একজন কানাডা, অপরজন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অবসরে যাওয়ার কথা আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি। তবে পদত্যাগ করলে এর আগেই তাঁর মেয়াদ শেষ যাবে। আর বর্তমানে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা।
এর আগে গত সোমবার রাষ্ট্রপতি বরাবার এক মাসের ছুটির আবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। ওই সময় তিনি ছুটির কারণ হিসেবে অসুস্থতার কথা বলেন।
পরে আইনমন্ত্রী অনিসুল হক জানান, প্রধান বিচারপতি ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। অবশ্য প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার সঙ্গে সরকারের সঙ্গে বিরোধের কথা ওঠে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।
এর আগে গত ১০ ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে ছুটিতে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন।
প্রসঙ্গত, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশের পর মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি। জাতীয় সংসদেও তাঁর সমালোচনা করা হয়।
১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।
২০১৫ সালে তিনি প্রধান বিচারপতির হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর প্রধান বিচারপতি থাকাকালে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার রায় এসেছে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ঘোষণা ও পর্যবেক্ষণে মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করায় সরকারের পক্ষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছে প্রধান বিচারপতির ওপর কারো চাপ থাকতে পারে।
এ বিষয়ে আইনসচিবের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করেই বলছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। তিনি অসুস্থতাজনিত কারণেই ছুটিতে গেছেন।’ আইনসচিব বলেন, ‘আমার জানামতে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত।
তিনি এর আগেও অনেকবার ছুটি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন হয়তো অসুস্থতা আরো বেড়েছে।
চিকিৎসার জন্য তিনি সরকারের কাছ কয়েক দফায় টাকাও নিয়েছেন। কাজেই প্রধান বিচারপতির এবারের ছুটিতে যাওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।’
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবারও বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে জোর করে দায়িত্ব পালন বিরত রাখা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় অস্তিত্ব সংকটের ভীতিতে বেসামাল গেছে। প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। সূত্রঃ আমাদের সময়.কম