টানা পাঁচদিন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ঘুরে প্রায় মুষড়ে পড়ার মতো অবস্থা ইরানের একজন স্বনামখ্যাত এনজিও নেত্রীর।

তিনি একাই বাংলাদেশে এসে ঢাকা থেকে সরাসরি চলে যান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর মানবেতর অবস্থা স্বচক্ষে দেখে হতবিহ্বল প্রায়।

বললেন, এটা কোন মানবতা, এটা কেমন জীবন মানব সন্তানদের। পৃথিবীর কোথাও এমনটি দেখিনি।

তেহরান ভিত্তিক নারী ও শিশু শরণার্থী বিষয়ক নামকরা এনজিও ‘হামি’ এর নির্বাহী পরিচালক ফাতেমেহ আশরাফি রোহিঙ্গা শিবিরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা এই প্রতিনিধিকে জানালেন বুধবার রাতে।

তিনি তেহরান ফিরে আরো কিছু ইরানি এনজিওকে সংগঠিত করবেন।

শিশু ও নারী শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করবেন। ফাতেমেহ আশরাফি কক্সবাজার পাঁচদিন অবস্থানকালে নিজেই প্রায় দশ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ নগদ সহায়তা কয়েক লাখ টাকার ওষুধ ও খাবার বিতরণ করেন।

 

দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধির কাছে বালুখালি, কুতুপালং, হাকিমপাড়া, ময়নারখানা, পালংখালিসহ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ওরা এসেছে কেবল নিজের প্রাণটা হাতে নিয়ে।

তাদের সবই দিতে হবে। এমন মর্মস্পর্শী ও করুণ অবস্থা পৃথিবীর কোথাও আছে বলে জানা নেই।

আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে আসা প্রায় ৪০ লাখ শরণার্থী বহুবছর ধরে ইরানে অবস্থান করছে। তাদের জন্য কাজ করছি। বসনিয়া হারজেগোভিনায় শরণার্থী আছে। কোথাও এমন করুণ চিত্র দেখিনি।

পরনে পোশাক বলতে নেই, মুখে দিনের পর দিন না খাবার চিহ্ন, ভাঙা শরীর— এ যেন মানবেতর নয় আরো করুণ অবস্থা। মানব সভ্যতা এটা মানতে পারে না। সোমালিয়ায় কাজ করেছি। সেখানে এত নিঃস্ব আর মানবেতর অবস্থা নেই শরণার্থীদের।

তিনি বললেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন স্বাস্থ্য সেবা। কারণ রাখাইন রাজ্যের নির্যাতন, নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগের কালো স্মৃতি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের মন থেকে মুছে যায়নি। তাদের মধ্যে এক ধরনের ট্রমা ভর করেছে।

বাংলাদেশ একদিকে লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্য দিকে দ্বি-পাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোকে এখনই এগিয়ে আসা উচিত মন্তব্য করে ইরানি এনজিও নেত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও স্বমর্যাদায় নিজ বাসভূমিতে ফিরে যেতে চায়। এটাই সংকট সাধানের পথ। সবাইকে সেই ব্যবস্থাই করা উচিত।

আশার কথা হলো- বাংলাদেশের সরকার আর বিদেশিদের পাশাপাশি এদেশের সাধারণ মানুষ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা বিরল ঘটনা।

‘হামি’র নির্বাহী পরিচালক জানান, ইরান সরকার ইতোমধ্যে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দুইটি উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে। পররাষ্ট্র উপ-মন্ত্রী ও কয়েকজন এমপি ঘুরে গেছেন।

আগামী সপ্তাহে বড় প্রতিনিধি দল আসবে। ইরান সরকার রাখাইনে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। পুরো মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 


Comments