রোকনুজ্জামান রোকন
সকালে উঠে নিউজফিড কিংবা হোমপেজ চেক করলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়!
একই সাথে চাকরীতে জয়েন করে কেউ সদর্পে দাপিয়ে বেড়ানো ছবি ফেসবুকে আপলোড করছে, কেউ মেস নাইট উদযাপনে ব্যস্ত, কেউবা কর্মস্থলের মায়াভরা সস্তিপ্রিয় ছবি দিচ্ছে! ভালোই লাগে দেখতে!
ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের এসব কর্মযজ্ঞ আর মন মাতানো ফুরফুরে মেজাজ আমাকে মুগ্ধ করে! নিজেকেও সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা ভেবে নিজের ভাল লাগাতে যেয়েই বিপদে পড়ি!
আজব এক ক্যাডার শিক্ষা ক্যাডার! বহু মেধাবী ছেলেমেয়ে এই ক্যাডারে আছে। আমি বিশ্বাস করি যদি তারা তাদের মেধার ৫০% কাজে লাগায় এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় পিছিয়ে থাকবে না বরং বহুক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে!
শিক্ষা ক্যাডাররা প্রশাসন, পুলিশ কিংবা অন্যান্য সাধারণ ক্যাডারের তুলনায় কোন অংশে কম নয়! মেধার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েই তারা এসেছেন! সুতরাং বিশেষ মর্যাদার প্রত্যাশা তারা করতেই পারেন! তাদেরকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পাল্টে যেত!
পরিত্যক্ত মেধাগুলোকে একমাত্র শিক্ষকরাই কাজে লাগাতে পারে! দুর্লভ গবেষণার মাধ্যমে তারা তুলে আনতে পারে বাস্তব তথ্য, দিতে পারে সভ্য জাতি গড়ার অনুপ্রেরণা! উন্নত দেশসমূহে তাইতো শিক্ষকদের এতই কদর!
কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের শিক্ষা ক্যাডারদের! তাদের মেধাকে কাজে লাগানো তো দূরে থাক কিভাবে এই ক্যাডার সার্ভিসকে ধ্বংস করা যায় সেই ষড়যন্ত্রে মেতেছে কিন্তু স্বার্থলোভী নিস্কর্মা ব্যক্তিরা!
স্বচ্ছ শিক্ষাব্যবস্থা স্বচ্ছ শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলে! কিন্তু আমরা বাইরে ঠিকঠাকই আছি ভিতরে একটি নয় অনেকগুলো বিশেষ ঘাটের ব্যবস্থা করে রেখেছি যেখানে বিভিন্ন শ্রেণী এবং পেশার মানুষ শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন এদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে!
লোক দেখানো নীতির বহি:প্রকাশ স্বল্প সময়ের জন্য গৌরব বয়ে আনলেও দীর্ঘমেয়াদী দুর্নামই বয়ে আনে!
দেশের কর্ণধরদের সবদিকে নজর দেয়াটা বোধকরি অবৈধ নয়! ১ মন গুরুর মাংসে ১ ফোটা গরুরচোনাই যথষ্ট যদি সেটি সম্মুখে ঘটে! আজ শিক্ষা ক্যাডারদের সামনেই সুকৌশলে শিক্ষা ক্যাডারকে মাটি দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে! ঘরে বাইরে শত্রুর অভাব নাই!
আত্নীয়-স্বজনদের আবদার রক্ষা করতে মরিয়া স্বজনপ্রেমীরা! একজন আরেকজনকে খোচাচ্ছেন কাকে বিশ্বাস করব বুঝে ওঠা কঠিন! দেশের আমলারা বসে আছেন সেদিকে, সুযোগ তারা বানিয়ে নেয়, পাইলেও কমে ছাড়েন না! এদিকে মন্ত্রী মহোদয়কেও আমরা বোঝাতে অক্ষম কারণ তিনি রেস্ট্রিক্টেক!
কত আন্ডার মেট্রিক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পায় কিন্ত আমরা দুর্ভাগা মাষ্টার! আমাদের মর্যাদা থাকতে নেই, নিরাপত্তা থাকতে নেই, কেউ একঘুষি বসিয়ে দিলেও বাবা বলে অন্যায় আবদার মেনে নিতে হয়! পরীক্ষার হলে স্থানীয় সোনার ছেলেদের যত্ন খাতির করে চোখ বন্ধ রাখতে হয়!
ক্লাস শেষে বসার জায়গাই আমরা খুজে পাইনা! অনেক আত্নীয় স্বজন আমাদের, তাদের অধীনেও আমরা আমাদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি! কিন্তু এভাবে আর কতদিন!
দেশে এমন কি কেউ নাই যে শিক্ষার মনোন্নয়ে কান্ডারীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন, ফিরিয়ে আনবেন হারানো গৌরব! যিনি মুখে কিংবা শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে বাস্তবায়ন করবেন সকল ফর্মুলা! তা নাহলে যে দেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাব, ভুলে যাব এদেশের ভবিষৎ!
মাস্টার মানুষ, বিশেষ খেতাব! এর চাইতে বেশী কেনো আশা করব! ইচ্ছা থাকলেও মতামত প্রকাশের সুযোগ নেই! সরকারী কর্মকর্তা বলে কথা!
লেখক: রোকনুজ্জামান রোকন। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে প্রথমস্থান অধিকারী।