‘গরিব’ পুলিশ কর্মকর্তার ৪৫ লাখ টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ির চাপায় প্রাণ গেল মোমেন (৪৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর। মেহেদী আলম নাদিম নামে আরেকজন আহত হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মুত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলক্ষেতের ৩০০ ফুট সড়কে। বেপরোয়া গতিতে চলা ওই গাড়ির চালক ঘটনার পর পালিয়ে গেছেন। গাড়ির মালিক ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার অপারেশন অফিসার পরিদর্শক শফিকুর রহমান।
পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে পরিদর্শক শফিকুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, গাড়িটি তার নয়।
শফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ওটা আমার গাড়ি না। যে তথ্য দিয়েছে সে ভুল তথ্য দিয়েছে। এটা আমার পরিচিত একজনের। যিনি বলেছেন, তিনি হয়তো বলতে ভুল করেছেন। ব্যস্ততার কারণে তিনি কোন বিষয়টা কোনভাবে খেয়াল করেছেন আমার জানা নেই।’
শফিকুর দাবি করেন, ওই গাড়িটির মালিক ধানমণ্ডির এক ব্যক্তি। তিনি এখন চট্টগ্রামে আছেন। তবে সেই ব্যক্তির নাম বলেননি শফিকুর রহমান।
এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ওসি শহীদুল হক যুগান্তরকে বলেন, আমরা সোর্স থেকে জানতে পেরেছি ওই গাড়ির মালিক রমনা থানার অপারেশন অফিসার (শফিকুর রহমান)। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইন সবার জন্য সমান। এ ঘটনায় সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খিলক্ষেত থানা সূত্র জানায়, বিলাসবহুল গাড়িটি হুন্দাই ব্র্যান্ডের। রং সাদা। গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫৩২৫৫। ঘটনার পর গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। এখন এটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বুধবার দুপুরের পর খিলক্ষেত থানায় গিয়ে দেখা যায়, হুন্দাই ব্র্যান্ডের ওই গাড়িটি থানার সামনে রাখা। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়ির সামনের দিকের বাম পাশের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাপড় দিয়ে গাড়িটি ঢেকে রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত মোটরসাইলটিও থানায় এনে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা করেছেন নিহত মোমেনের ছেলে মশিউল ফাহিম। তিনি জানান, মোমেন ও তার বন্ধু মেহেদী আলম নাদিম মোটরসাইকেলে উত্তরা থেকে ৩০০ ফুট সড়কে যান। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি বিলাসবহুল প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
আরোহী দু’জনই কয়েক ফুট দূরে ছিটকে পড়েন। সড়কে পুলিশ চেকপোস্ট থেকে ২০০ গজ দূরে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলেই মারা যান মোমেন। মেহেদী আলম নাদিম একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তারা পেশায় ব্যবসায়ী। তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী সদরে।
ঘটনার ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে যান নিহত মোমেনের বন্ধু নজরুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার পর একটি ট্রাকে করে দু’জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই ট্রাকটি ঘটনাস্থলের খুব কাছেই ছিল।
ট্রাকের চালক আমাদের বলেছেন, গাড়ির চালক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিল। তার সঙ্গে এক তরুণীও ছিল। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যায়। পুলিশের উপস্থিতিতেই গাড়ির চালক ও তার সঙ্গে থাকা তরুণী পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার এসআই আবদুছ ছামাদ যুগান্তরকে বলেন, আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। বিস্তারিত তথ্য এখনও পাইনি।
ওই গাড়ির চালকের নাম আমরা পেয়েছি। তার নাম জুয়েল। বিআরটিএ থেকে গাড়ির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেলে এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।