চরিত্রের দিকে আঙুল ওঠায়, ঘ্যাঁচ করে নিজের পুরুষাঙ্গটাই কেটে ফেললেন ‘সাধু’! না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশি। পুরুষাঙ্গকে ‘শাস্তি’ দিতে গিয়ে, নিজের জীবনকেই তিনি বিপন্ন করে তুলেছেন। যুঝছেন মৃত্যুর সঙ্গে।
ভারতের রাজস্থানের চুরু জেলার বছর বত্রিশের ওই সাধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এক মহিলার সঙ্গে তিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এই সম্পর্ক নিয়ে আশ্রমে কানাঘুঁষো শুরু হওয়ায়, বিব্রতই ছিলেন তিনি। ‘সাধু’জীবনের কলঙ্ক মুছতে ধারালো ছুরিতে এদিন সকালে নিজের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলেন।
রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে তারানগরের আশ্রম থেকে উদ্ধার করে, স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে বিকানেরে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজস্থানের স্বঘোষিত ওই সাধুর নাম সন্তোষ দাস। তারানগরে তার আশ্রম রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তিনি নিজেই এই কাণ্ড করে বসেন।
কী কারণে এই সাধু এমন একটা কাণ্ড করে বসলেন, তা নিয়ে ধন্দে আছে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, সন্তোষ দাস এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ফলে, তার বয়ান রেকর্ড করা যায়নি।
ফলে, সঠিক কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে, আশ্রমের চারপাশের মানুষজন দাবি করেছেন, মহিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই পরিণতি। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। এক্ষুনি কিছু বলা যাবে না।
এর আগে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে এখন ২০ বছরের সাজা ভোগ করছেন ধর্মগুরু ডেরা সাচা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিং।
ভক্তের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন সিয়া রাম দাস নামে আরেক ‘ধর্মগুরু’।
আরেক কথিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৩ সালের আগস্টে গ্রেফতার হন।
ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে গত ২৫ আগস্ট হরিয়ানার একটি আদালত ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে, যা নিয়ে হরিয়ানা আর পাঞ্জাবে রীতিমতো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে। পরে তাকে ২ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
হরিয়ানা-পাঞ্জাবে অন্তত ৫ লাখ সরাসরি ভক্ত আছে গুরমিত রাম রহিমের। তাদের দাবি, সারা বিশ্বে গুরু রাম রহিমের ভক্তের সংখ্যা ছয় কোটি।
রাম রহিম ডেরা সাচ্চা সৌদা নামে একটি সম্প্রদায়ের নেতা-হরিয়ানার সিরসায় তার প্রকাণ্ড হাইটেক আশ্রম। তাকে ঘিরে থাকে সশস্ত্র রীর দল। শিখ, হিন্দু ও মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলেই তৈরি হয়েছে তার ধর্মীয় সম্প্রদায়।
ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। শাহ মস্তানা নামে এক ধর্মগুরু এর পত্তন করেন। বর্তমান প্রধান গুরমিত সিং ১৯৯০ সালে সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের ভার নেন।
রাম-রহিম একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, সিনেমার নায়ক ও পরিচালক।
অনেকগুলো চলচ্চিত্র তিনি তৈরি করিয়েছেন, আর সেই সব ছবিতে নিজেই নানা রকম স্টান্ট দেখান তিনি। যেগুলো হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ উত্তর প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়।
রাম রহিমের মতো ৭৬ বছরের আসারাম বাপুও ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত। আসারাম বাপু ও তার ছেলে নারায়ণ সাইয়ের বিরুদ্ধে সুরাটের দুই বোন ধর্ষণ ও বেআইনিভাবে আটকে রাখার অভিযোগ করেন। বড় বোনের অভিযোগ ছিল, আসারাম তার ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বারবার যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। সে সময় তারা আহমদাবাদের কাছে আসারাম বাপুর আশ্রমেই থাকতেন।
রাজস্তানের এক কিশোরীও আসারামের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলে। যোধপুরের কাছে মানাই গ্রামে আসারামের আশ্রম। উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের ওই কিশোরী যোধপুরের ওই আশ্রমেই থাকত।
এসব অভিযোগের পরেই ২০১৩ সালের আগস্টে আসারামকে গ্রেফতার করে যোধপুর পুলিশ। আসারামের বিরুদ্ধে চার্জশিটে তার স্ত্রী লক্ষ্মীবেন, কন্যা ভারতী ও ধ্রুভবেন, নির্মলা, জস্যি ও মীরা নামের চার শিষ্যার বিরুদ্ধে ধর্ষণে মদদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এক তরুণীকে টানা আট মাস ধরে লাগাতার ধর্ষণের অভিযোগে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরু সিয়া রাম দাসকে। উত্তর প্রদেশের মিশরিকে সিয়া রাম দাসের আশ্রমেই আট মাস বন্দি ছিলেন ওই তরুণী।
পুলিশ সূত্রে খবর, তরুণীরই এক আত্মীয় তাকে ৫০ হাজার রুপিতে বিনিময়ে আশ্রমে বিক্রি করে দেয়। তারপরই তিনি যেন আশ্রমের কেনা সম্পত্তি হয়ে ওঠেন।
তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, এই আট মাস ধরে প্রতি রাতে ধর্ষিতা হয়েছেন তিনি। শুধু সিয়া রাম দাসের লালাসর শিকারই নয়, কেনা সম্পত্তি মনে করে বাবা ভোগের জন্য শিষ্যদের হাতেও তুলে দিত তাকে। ফলে যথেচ্ছ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। কোনো ক্রমে একদিন তরুণী নিজের ফোনটি পান। সেখান থেকে পুলিশকে ফোন করে তার অবস্থার কথা জানান।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ আর এক গুরুমিত সিংয়ের সন্ধান পান। আশ্রম বানিয়ে লোকের চোখকে ধুলো দিয়ে ধর্মগুরু ভেকধারী বাবার সেই যথেচ্ছ যৌনাচারের গল্প। এমনকী সিয়া রাম দাস সেক্স ব়্যাকেট চালাত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশকে ওই তরুণী জানিয়েছেন, রাম দাস বাইরে একটি গার্লস স্কুল খুলেছে। সে স্কুলের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। ওই স্কুল থেকেই নাবালিকা কন্যাদের ভোগের জন্য পাঠানো হতো বিভিন্ন নেতার কাছে।
ফলে রাজনৈতিক মহলেও বাবার বিশাল প্রভাব। সেই কারণেই কেউ টুঁ শব্দটি করতে পারে না। নিয়মিত নির্যাতনের পর সাহস দেখিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তরুণী। ফলে আরো এক ভণ্ড ধর্মগুরুরপর্দা ফাঁস হলো।