গোটা মিয়ানমার জুড়ে সশস্ত্র বিদ্রোহ তীব্র রূপ ধারণ করেছে। দেশটির কচিন, কায়া, কায়ান, কোকাং, চীন ও শান প্রদেশে চলছে বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংগ্রাম।
ফলে দেশটি এখন ত্রিমুখী সঙ্কটে। একদিকে সেনাসদস্যদের নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিকাণ্ডে ভাবমূর্তি সঙ্কট, অন্যদিকে তীব্র শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টি করায় আন্তর্জাতিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা। এমতাবস্থায় বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংগ্রাম যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে।
ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ভারত ও চীনেরও সক্রিয় তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ব্রিটেন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসঙ্ঘ, ইউএনএইচসিআর, ইউরোপীয় কমিশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ্, অক্সফামসহ বিভিন্ন সংস্থা নিন্দা জানিয়েছে। নোবেলজয়ী বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা দালাইলামা, দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই, বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসহ বিশ্বের আরো অনেক ব্যক্তিত্বও মিয়ানমার সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি নিরব ভূমিকায় জন্য ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়েছেন।
রোহিঙ্গা ছাড়াও জাতিগত কারিন, চিন, খ্রিষ্টধর্মপ্রধান কাচিন জাতিগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক বৈষম্য ও নির্যাতন চলছে। দেশটিতে ১৩৫টির বেশি জাতিগোষ্ঠী থাকলেও সরকারিভাবে মাত্র ৮টি প্রধান গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। ফলে গড়ে ওঠছে বিদ্রোহী গোষ্ঠি।
বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারের সংঘাত চলছে নিয়মিত, কয়েকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা, জাতিগত বৈষম্য ও নির্যাতনের কারণে দেশটির ১৪টি প্রদেশের ৭টিতেই যুদ্ধ প্রকট হয়ে উঠেছে, দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছে।
মিয়ানমারের রাজ্যগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই- ১৯৮৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কারেন ও শান রাজ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গ্রাম ধ্বংস করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই কচিন রাজ্যের অধিবাসী ও খ্রিস্টানদের সংখ্যা কমাতে নির্যাতন ও শোষণ চালাতে থাকে ।
১৯৬২ সালে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কচিনের লোকজন দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে। এই ক্ষোভে কচিনের অধিবাসীরা ১৯৪৭ সালে করা চুক্তি ভেঙে দিয়ে ১৯৬১ সালে স্বাধীনতার দাবি করে এবং সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। কচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশন (কেআইও) এর অধীনে গঠন করে কচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ)। এরপর থেকেই সংঘাত চরম আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে সরকার ও কেআইএ এর মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়, যা ২০১১ সাল পর্যন্ত চলে। ২০১১ সালে এই গ্রুপটির সাথে সংঘর্ষে একসাথেই নিহত হয়েছে ২১১ সরকারি সৈন্য। ২০১২ সালে সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে ১১২ সেনাসহ আড়াই হাজার লোক হতাহত হয়, ৩৬৪টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। বিভিন্ন সময় কাচিন বিদ্রোহীদের সাথে সরকারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও তা স্থায়ী হয়নি, থেমে থেমে এ লড়াই এখনো চলছে।
কায়াহ রাজ্যের সংগঠন ‘কারেনি’ হচ্ছে মিয়ানমারের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন। কারেনি আর্মিরা এখনো কারেনি জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে চলেছে। ২০১২ সালে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত এই গ্রুপটি নিয়মিতই সশস্ত্র হামলা চালাত সরকারি বাহিনী ও স্থাপনায়।
প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর এই রাজ্যের অধিবাসীদের অভিযোগ হলো সরকার জোর করে কৃষকদের জমি দখল করেছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করছে, চাঁদাবাজি ও সস্তা দামে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য করছে, জোরপূর্বক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করছে, গরিব লোকদের টাকার জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মধ্যে ভূমি মাইন স্থাপন করে মেরে ফেলা, হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, খাবার ধ্বংস ও গৃহপালিত পশু নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি সরকারি বাহিনীর স্বাভাবিক আচরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী থেকে চাকরি ছেড়ে জেনারেল বি হু দেড় হাজারের বেশি সৈন্য নিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিই এখন কারেনি আর্মির প্রধান।
মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় কাইন রাজ্যের জনগণ ১৯৪৯ সাল থেকেই স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন ও সশস্ত্র লড়াই করে চলেছে। কারেন জনগণকে স্ব-নিয়ন্ত্রিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কারিন ন্যাশনাল ইউনিয়নের অধীনে গঠিত কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।
১৯৭৬ সালে নতুন দাবি তুলে স্বতন্ত্র ফেডারেল ইউনিয়ন করার প্রস্তাব দেয় মিয়ানমার সরকারকে। ১৯৯৫ সালে সরকারি বাহিনী কারিন ন্যাশনাল ইউনিয়নের সদর দফতরসহ বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিলে জঙ্গলে আশ্রয় নেয় এই বিদ্রোহীরা। বর্তমানে এই গ্রুপটির সাথে মিয়ানমার সরকারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর রয়েছে।
শান রাজ্যের শান জাতিগোষ্ঠী ১৯৪৭ সালে পাংলং চুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়। অং সান সু চির পিতা অং সানের নেতৃত্বে সম্পাদিত এই চুক্তি থেকেও মুখ সরিয়ে নেয় মিয়ানমারের সেনা-সমর্থিত সরকার। গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর হত্যা, জুলুম, নির্যাতন, নারীদের ধর্ষণ, অযথা গ্রেফতার, সম্পদ লুট ও গণহত্যা চালায়।
এর প্রতিবাদে ১৯৫৮ সালের ২১ মে সাও নোই এবং সাও ইয়াননার নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। শানের স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর গঠিত স্বতন্ত্র সেনাবাহিনী ‘শান স্টেট আর্মি-সাউথ’ এর সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে ৮ হাজার। এ স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী মূলত কাজ করে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তে। ২০১১ সালে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সমঝোতা চুক্তি করে অস্ত্রবিরতি করে। এছাড়াও শান স্টেট আর্মি (নর্থ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মিসহ ছয়টি পৃথক সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় রয়েছে।
মিয়ানমারের অপর রাজ্য কোকাং এলাকায় মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক এলিয়ান্স আর্মি (এমডিএএ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহ শুরু করে। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠার বছরই সংগঠনটির সঙ্গে সমঝোতায় যায় সরকার, যা ২০০৯ সাল পর্যন্ত টিকেছে। এখনো মাঝে মাঝেই সরকারের সঙ্গে সংঘাত বাধে।
পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের উত্তরাংশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই মুসলমান। আরাকানে বসবাস কারী প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গারাই পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীগুলোর একটি। নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় সকল প্রকার নাগরিক ও মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা। মিয়ানমারে ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য পরিচয়পত্র থাকাটা খুব জরুরি বিষয়।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টিতে অবৈধ অভিবাসী তথা বিদেশি, সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত। রোহিঙ্গারা কোনো ভূমি বা, স্থায়ী সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের বসবাসের ভূমি যেকোনো সময় দখল করে নিতে পারে সরকার। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে খাটানো হয়। শহরের সৌন্দর্য্যবর্ধন, সরকারি জমি অধিগ্রহণের নামে রোহিঙ্গাদের অনেক মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে, অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল/বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গারদের ওপর থেমে থেমে ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬-২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন ও জাতিগত নিধন হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ লুট ও এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়ায় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা ফের নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে যা হয়েছে তাকে শুধু গণহত্যার সাথেই তুলনা করা যায়। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নাম করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধে নামে সেনাবাহিনী।
নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় সেনাসদস্যরা। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া নারী ও তরুণীদের লাশ পাওয়া যায় রাস্তা কিংবা জঙ্গলের ধারে। বাড়িতে আগুন দিয়ে তার মধ্যে ছুড়ে ফেলা হয় অবুঝ শিশুদের। দুই মাসে নিহত হয়েছে কয়েক শ’ রোহিঙ্গা। কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি-মসজিদে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর। পুরো অঞ্চলটি অবরোধ করে কোনো পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক বা ত্রাণকর্মীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
মিয়ানমারে নরকের এই রূপ হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাপানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার। পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে করা চুক্তির আওতায় নানা মত-বিশ্বাস-ধর্মের মানুষ একসাথে ছিল।
কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র তিন মাসের মাথায় সেই চুক্তি ভঙ্গ করে জুলুম, হত্যা, ধর্ষণ, লুট ও নির্যাতন চালাতে শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। সরকার বিরোধী আন্দোলন চালানো শুরু করে ৪২টি সংগঠন, তন্মধ্যে ২২টি সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন; বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২৩টি সংগঠন। ফলে দেশটি দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের দেশে পরিণত হয়। এই গৃহযুদ্ধ থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন।
মিয়ানমারের ইতিহাস সামরিক জান্তাদের চুক্তি ভাঙের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে অং সান সু চির পিতা অং সান মিয়ানমারকে বড় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য কচিন, কায়ান, শান, চীন ও কারেনসহ কয়েকটি প্রদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। এই চুক্তিতে শর্ত ছিল সবাই বার্মার সঙ্গে একীভূত হবে। মিয়ানমারের শাসন পদ্ধতি ও সরকারের প্রতি কেউ অসন্তুষ্ট হলে তারা আলাদা হয়ে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে থাকতে পারবে। মিয়ানমার এক্ষেত্রে তাদের কোনো বাধা দিবে না।
কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের ছয় মাস আগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গঠিত ছায়া সরকারের প্রধান অং সান। স্বাধীনতার কয়েক মাস পরেই তাকে হত্যার পর এই চুক্তি থেকে মুখ সরিয়ে নেয় মিয়ানমার সামরিক সরকার।
স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি একটি গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সময় পার করেছে, বিরাজ করছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ১৯৬০ সাল থেকেই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূলের অভিযানে নামে; সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা হয় ১৯৬২ সালে। ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান হয় দেশটিতে, শুরু হয় জাতিগত হত্যা। মুসলিম, খ্রিস্টান ও হিন্দুসহ কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখে। ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ৮৮ সালে, সেই বিক্ষোভ ইতিহাসে ৮৮৮৮ বিক্ষোভ নামে পরিচিত।
এ সময়ই সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন অং সান সু চি। জেনারেল স মুংয়ের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে দেশটির নাম বার্মা থেকে মিয়ানমার করে, রাজধানী রেঙ্গুনের নাম পাল্টে রাখে ইয়াঙ্গুন, রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা পুনর্বহাল কমিটি (এসএলওআরসি) গঠন করে। ১৯৯০ সালে দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পার্লামেন্টের শতকরা ৮০ ভাগ আসন পেয়ে জয়লাভ করে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)।
১৯৯২ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে জেনারেল মুং ক্ষমতা ছেড়ে দিলে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড জেনারেল থান শোয়ে নিজেকে সিনিয়র জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নিত করার ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেন। ২০০৫ সালে তিনি রাজধানী পরিবর্তন করে ইয়াঙ্গুন থেকে পিনমানা শহরে নিয়ে আসেন। ২০০৮ সালে প্রবর্তিত নতুন সংবিধানে সামরিক জান্তা দেশটির প্রশাসনসহ সব স্তরকে সামরিকীকরণের বৈধতা দেন। ২০১০ সালে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করলে পাতানো নির্বাচনের অভিযোগে অং সান সু চির দল সেই নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচনের আগেই সু চিকে গৃহবন্দী করা হয়।
২০১১ সালে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে না পেরে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৩টি লাভ করে সু চির দল। ২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে গণতন্ত্র ফিরে আসে দেশটিতে। তারপরও স্থিতিশীলতা ও শান্তি আসেনি দেশটিতে বরং বর্তমানেই সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কট চলছে।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের নভেম্বরেও স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার জাতিগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র সংগঠন কোচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (আরাকান আর্মি) তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের চীন সীমান্তে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়।
২০১৭ সালের মার্চে দেশটির সেনাবাহিনী জানায়- সংঘর্ষে ৭৪ সেনা, ১৫ পুলিশ, সরকারের সহযোগি বাহিনীর ১৩ সেনা এবং ১৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। সেনাবাহিনীর কাছে শত্রুর ৪৫টি মৃতদেহ আছে এবং চারজনকে আটক করে। এই ধরণের সংঘাত দিন দিন বেড়েই চলছে।