রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা ঘেঁষে তারাগঞ্জের সয়ার ধোলাইঘাট সরকারি প্রাথমিক ও সয়ার শ্যামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে।

এই দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা খেয়াল খুশিমতো ক্লাস নিচ্ছেন। পাঠদানের জন্য ভাড়াটিয়া শিক্ষক রাখার অভিযোগ ওঠেছে বিদ্যালয় দুইটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই দুই বিদ্যালয়ে সরেজমিনে যাওয়া হয়।

সোয়া তিনটার দিকে সয়ার শ্যামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুইজন তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন লুঙ্গি পরিহিত তরুণ।

তার নাম শিপন মিয়া। তিনি পঞ্চম শ্রেণির ইসলাম ধর্ম ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি বলেন, 'আমি শিক্ষক নই। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মুর্শিদা আপার পরিবর্তে ক্লাস নিচ্ছি।'

তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোতাহার হোসেন। তিনি বলেন, 'বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক। শিল্পী বেগম নামে একজন সহকারী শিক্ষিকা দেড় বছরের প্রশিক্ষণে রংপুরে গেছেন। প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন সরকার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গেছেন।

সহকারী শিক্ষিকা মুর্শিদা বেগমের সন্তান হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তিনি টিফিনের সময় চলে গেছেন। লুঙ্গি পরিহিত তরুণ ক্লাস নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে-তিনি বলেন, 'মুর্শিদা বেগমের নির্দেশে ওই তরুণ ক্লাস নিচ্ছে।' সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মোটর সাইকেল চেপে বিদ্যালয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন সরদার।

তিনি সরাসরি পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে প্রবেশ করেন। তাৎক্ষনিক লুঙ্গি পরিহিত তরুণ বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। শিক্ষক না হয়েও ওই তরুণ ক্লাস নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, 'আপনি (সাংবাদিক) ভুল দেখেছেন। ওই তরুণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়। সে কেন ক্লাস নিবে?

ওই তরুণের ক্লাস নেওয়ার ভিডিও এবং তার বক্তব্য শোনালে তিনি হতভম্ব হয়ে যান।এরপর প্রধান শিক্ষক বলেন, 'ওই তরুণ এবার জেডিসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে গরীব ঘরের সন্তান। বিদ্যালয়ে সে বেশির ভাগ সময় থেকে ঘর ঝাড়ু দেয়। আমরা তাকে লেখাপড়ার জন্য কিছু সম্মানী দেই।'

দুপুর আড়াইটায় সয়ার ধোলাইঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষিকা অনুপস্থিত। সেখানে দুইজন ক্লাস নিচ্ছেন। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলছে। শিক্ষার্থী কৌলাশ রায় ও মুন্না বলে, 'স্যার এখনও ক্লাসে না আসায় বাইরে খেলছি।'

রমানাথ চন্দ্র রায় নামে এক সহকারী শিক্ষক চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন। পাশে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন নুরুল হুদা নামে এক যুবক। নুরুল হুদা বলেন, 'আমি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক নই। প্রধান শিক্ষিকা আমাকে দেড় মাস আগে প্যারা শিক্ষক হিসেবে রেখেছেন।'

প্রধান শিক্ষিকা মাসে কতটাকা বেতন দেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চুক্তি হয়নি। এখনও টাকা দেয়নি।' কথা বলতে বলতেই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষিকা নুরুন্নাহার বেগম।

বিদ্যালয়ে না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার এক শিক্ষার্থী অসুস্থ। তাকে দেখার জন্য ঘণ্টাখানিক আগে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম।'

বৃহস্পতিবার সকালে মোবাইল ফোনে তারাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম বলেন, 'বিদ্যালয়ে ভাড়াটিয়া শিক্ষক রাখার কোন বিধান নেই। বিষয়টি শুনেছি।

দুই প্রধানকে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

 


Comments