![](http://www.studyandjobs24.net/assets/records/news/201711/2280_181.jpg)
অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যবেক্ষক মোতায়েন করতে চায় ইউজিসি। সংস্থাটির কোনো সদস্য বা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদকে ওই পদে মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে বলে মনে করছে তারা।
বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করতে যাচ্ছে ইউজিসি। এতে মোট ২৪টি সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সভায় প্রতিবেদনটি অনুমোদন পেয়েছে। রীতি অনুযায়ী এটি শিগগিরই জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া এটি রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তরের রেওয়াজও আছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যবেক্ষক মোতায়েন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে ইউজিসির একজন সদস্য বা কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাসহ গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন শিক্ষাবিদকে কমিশন কর্তৃক পর্যবেক্ষক মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে।
এ লক্ষ্যে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংশোধনী আনা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে উচ্চ শিক্ষায় দক্ষ ও মানসম্পন্ন শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য পুরনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপকদের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষাকৃত কম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেষণে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি ঢাকার বাইরের অপেক্ষাকৃত কম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাতে শিক্ষকতায় আগ্রহ সৃষ্টি হয়, সেজন্য শিক্ষকদের জন্য আকর্ষণীয় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা পাঠদান করতে পারেন, সেজন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বর্তমানে অনুমতি নিয়ে বা না নিয়ে গণহারে কিছু শিক্ষকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার ঘটনা ঘটছে। কোনো নীতিমালা বা আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেকেই মূল কর্মস্থল থেকে এ ব্যাপারে অনুমতি নিচ্ছেন না।
প্রতিবেদনে ৮৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০১৬ সালে মাত্র ৫টিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের বিষয়ে চরম উষ্মা প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ঘাটতি পূরণের জন্য অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের সম্মতি সাপেক্ষে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে।
এজন্য কমিশন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি ডাইরেক্টরি তৈরি করে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে পারে।
কওমি ও আরবি মাদ্রাসার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, কওমি মাদ্রাসা থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
এসব শিক্ষার্থীকে মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
ইউজিসি সরকারের পক্ষে দেশে উচ্চশিক্ষার ‘অ্যাপেক্স বডি’ হিসেবে কাজ করে আসছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে সংস্থাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সেই আলোকে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পেশ করে।
ইউজিসির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, জাতীয় ও উন্মুক্ত এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিষয়ক সরকারি এবং অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষক সংকট রয়েছে। দেশে দক্ষ ফ্যাকাল্টি তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্বমানের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত।
এ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেবে, সেখানে গবেষকরা দেশের আর্থ-সামাজিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা করবেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে না। প্রতি বছর আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয় না। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটের ক্ষেত্রে সিএ ফার্ম নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কেননা, বর্তমানে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে অডিট করা হয়, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঠিক আর্থিক চিত্র পাওয়া যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পছন্দের সিএ ফার্ম দিয়ে অডিট করায়। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিরপেক্ষ কোনো ফার্ম নিয়োগ করে অডিট করানো যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী একটি সেমিস্টারে শুধু দুটি কোর্স নিয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীর মর্যাদা পায়। স্নাতক পর্যায়ে শুধু দুটি কোর্স থাকার কারণে প্রচুর অবসর সময় পায় তারা। ফলে জঙ্গিবাদসহ নানা অতৎপরতায় যুক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এজন্য প্রতি সেমিস্টারে তিনটি কোর্স আবশ্যিক করার কথা বলা হয় সুপারিশে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা কর্মকর্তারা সংবিধান পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সর্তক থাকতে হবে। এতে আরও বলা হয়, উচ্চশিক্ষার মনোন্নয়নে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে মেধাবীদের দেশত্যাগে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতি চালু সুপারিশ করে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে মেডিকেল ভর্তির অনুরূপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থী হয়রানি এবং ব্যয় সঙ্কুচিত হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে বিশেষ নজরদারি পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।
প্রয়োজনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব দেশে উন্নত প্রযুক্তি ও কঠিন নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষা করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তা অনুসরণ করা যেতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও ইউজিসির জনবল বাড়েনি। এজন্য শিক্ষার মান ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউজিসিকে আরও শক্তিশালী ও জনবল বাড়ানোর প্রয়োজন।
শুধু মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করার বাইরে কমিশনকে আইনগতভাবে আরও শক্তিশালী করতে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণা খাতের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি তৈরি না করা পর্যন্ত ঢাকা বিসিএসআইআর ও আঞ্চলিক গবেষণাগার এবং আণবিক শক্তি কমিশনের গবেষণার সুযোগ দেয়া যেতে পারে।