গভীর রাতে সৌদি আরবের রাজপরিবারের অন্দরমহলে অভিযানের পিছনে কি শুধুই দুর্নীতি? নাকি পথের কাঁটা দূর করতেই যুবরাজের এমন পদক্ষেপ?

যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতার উৎসই বা কি এমন প্রশ্ন উঠছে বিশ্বজুড়ে।

একটা সময় ছিল যখন সৌদি আরবের বাইরে কম মানুষ মোহাম্মদ বিন সালমানকে চিনতেন।

২০১৫ সালে তার বাবা যখন সৌদি আরবের বাদশাহ হন, তখন থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম আলোচনায় আসতে থাকে। ৩১ বছর বয়সী এ ব্যক্তি সৌদি আরবের ভেতরে প্রবল ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন।

মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স পদে আসীন করেন তার বাবা এবং সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান। এ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল মোহাম্মদ বিন সালমানের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে।

ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে যিনি আসীন হন, পরবর্তীতে তিনিই হবেন সৌদি আরবের বাদশাহ।

বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট। তৎকালীন সৌদি প্রিন্স (বর্তমানে বাদশাহ) সালমান বিন আব্দুল আজিজ-এর তৃতীয় স্ত্রীর বড় সন্তান হচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজে করেছেন।

২০০৯ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার বাবার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তখন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন।

২০১৩ সাল থেকে মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। তখন তাকে মন্ত্রীর মর্যাদায় ক্রাউন প্রিন্স কোর্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ঠিক এর আগের বছর তার বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আসীন হয়েছিলেন।

মোহাম্মদ বিন নায়েফের বাবা নায়েফ বিন আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর সালমান বিন আব্দুল আজিজ ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আসীন হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মারা যাবার পর সালমান বিন আব্দুল আজিজ সৌদি আরবের বাদশাহ হন।

তিনি ক্ষমতাসীন হাবার পর তাৎক্ষণিকভাবে দুটো সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা। তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাবার পরেই ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে শুরু হয় সামরিক অভিযান।

হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গত দুই বছর ধরে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চললেও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। সৌদি আরব এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বাদশাহ সালমান তার ক্ষমতার উত্তরাধিকার হিসেবে বেশ নাটকীয় পরিবর্তন আনেন।

মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ করা হয়। একই সাথে তিনি সৌদি আরবের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান।

এরপর মোহাম্মদ বিন সালমান ২০৩০ সালকে লক্ষ্য করে সৌদি আরবের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ ঘোষণা করেন।

দেশর বাইরে তিনি তার বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজের প্রতিনিধিত্ব করে বেইজিং, ওয়াশিংটন সফর করেছেন। ওয়াশিংটন সফরে গত মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেন।

- বিবিসি বাংলা।

 


Comments