গ্রেফতারকৃত সৌদি প্রিন্স ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের রাজধানী রিয়াদের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের কক্ষে অস্থায়ী ‘কারাগারে’ রাখা হয়েছে।
গত মাসে এই হোটেলেই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই সৌদি আরবের রাজপরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এতে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্বরাও যোগ দিয়েছিলেন।
ওই কক্ষের প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে মেঝেতে পাশাপাশি রাখা কয়েকটি জাজিমে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন কয়েক ব্যক্তি। সৌদি সূত্র জানিয়েছে, এই কক্ষেই আরো অনেকের সাথে আটক অবস্থায় আছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল।
গোপন সূত্রে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের হাতে এসেছে এই বন্দীখানার ছবি। পত্রিকাটি জানতে পেরেছে রিয়াদের রিৎজ কার্লটন হোটেলে রাখা হয়েছে রাজবন্দীদের। ওই ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রিন্স আল ওয়ালিদের থাকার বিষয়টিও তারা নিশ্চিত হয়েছে।
এই ধনকুবেরের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার। টুইটার, লিফট ও সিটিগ্রুপের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মালিকানা রয়েছে তার।
এই ছবিগুলো এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের এই গ্রেফতার অভিযানের বৈধতা দিচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে জাপান ত্যাগ করার আগে টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্সের ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। তারা যা করছে জেনেশুনেই করছে।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সবে শুরু : সৌদি অ্যাটর্নি
রয়টার্স
সৌদি আরবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে বেশ কয়েকজন প্রিন্স ও মন্ত্রী গ্রেফতারের ঘটনায় ইতোমধ্যে দেশটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
তবে এটি কেবল অভিযানের শুরু বলে মন্তব্য করেছেন সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাউদ আল মুজেব। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি উপড়ে ফেলার লড়াইয়ে এটা প্রথম পদক্ষেপ’।
এক বিবৃতিতে অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাউদ বলেন, ‘এই গ্রেফতার প্রথম ধাপ। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ পেয়েছি আমরা। আর জিজ্ঞাসবাদ চলছে।’
ইরানের রকেট সরবরাহ সামরিক আগ্রাসন : সৌদি যুবরাজ
রয়টার্স
ইয়েমেনের বিদ্রোহী বেসামরিক বাহিনীর কাছে ইরানের রকেট সরবরাহকে সরাসরি সামরিক আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় মোহাম্মদ এ মন্তব্য করেন। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ এ খবর জানিয়েছে।
ইয়েমনের হাউছি বিদ্রোহীদের ইরানের রকেট সরবরাহ ‘সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল’ বলেও মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ।
শনিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বাদশা খালেদ বিমানবন্দরের কাছে হাউছিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী। কোনো হতাহতের ঘটনা ছাড়াই রিয়াদের বিমানবন্দরের কাছে ওই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল সৌদি আরব।
সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজের প্রতি ট্রাম্পের আস্থা
রয়টার্স
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এবং তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। বাদশাহ ও যুবরাজ যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা যথার্থ বলে তিনি দাবি করেছেন। আটককৃতরা দীর্ঘ দিন তাদের দেশকে শুষে খেয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
শনিবার থেকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সৌদি প্রিন্স ও মন্ত্রীদের নজিরবিহীনভাবে আটকের ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করছিল হোয়াইট হাউজ। তবে সোমবার এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থানই ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বর্তমানে এশিয়া সফরে থাকা ট্রাম্প টুইটারে বলেন, ‘সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ও যুবরাজের ওপর আমার ব্যাপক আস্থা রয়েছে, তারা যা করছেন তা যথার্থভাবে বুঝেই করছেন। তারা এখন যাদের প্রতি কঠোর হয়েছেন ওই লোকগুলো বছরের পর বছর ধরে তাদের দেশকে শুষে খাচ্ছে।’
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি আরামকোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত করার কথা বিবেচনা করার জন্য বাদশাহ সালমানকে আহ্বানের কয়েক দিনের মাথায় সৌদি প্রশ্নে আবারো টুইট করলেন ট্রাম্প।
পূর্বসূরি বারাক ওবামার তুলনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সাথে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখছেন। গত মে মাসে দেশটি সফরও করেন তিনি।
ওই সফরে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তিসহ ৩৮ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের চুক্তি করে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে ট্রাম্পের জামাতা ও সিনিয়র উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।