গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়া ঈদগাহ্ মাঠে জঙ্গি হামলায় কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে সরকার।
বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নজরদারী বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং, তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ বেশকিছু পরামর্শ আসে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে। এরমধ্যে জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতিকে দায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সংস্থাটির সর্বশেষ ২০১৬ সালে বার্ষিক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী একটি সেমিস্টারে শুধু দু’টি কোর্স নিয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীর মর্যাদা পায়।
স্নাতক পর্যায়ে শুধু দু’টি কোর্স থাকার কারণে প্রচুর অবসর সময় পায় তারা। এর ফলে জঙ্গিবাদসহ নানা অপতৎপরতায় যুক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এজন্য প্রতি সেমিস্টারে তিনটি কোর্স আবশ্যিক করার কথা বলা হয় সুপারিশে। এছাড়াও শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা কর্মকর্তারা সংবিধান পরিপস্থি কোনো কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে সুপারিশে।
এদিকে বাণিজ্যমুখী বিষয়গুলোকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো চাকরির বাজারে গুরুত্বপূর্ণ বা চাহিদাসম্পন্ন। বাংলা, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি এমনকি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো বিষয়ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বহীন। এসব কারণে শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে দেখছে ইউজিসি। কারণ বাণিজ্যনির্ভর বিষয়গুলোতে নৈতিক ও আদর্শিক বিষয় থাকে না।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি সেমিস্টার সিস্টেমেরই বিপক্ষে। আগে ইয়ার সিস্টেমই ভালো ছিল। একজন শিক্ষার্থীকে চারমাস বা ছয়মাসে মাত্র দু’টি কোর্স পড়বে, স্বাভাবিক কারণে তারা প্রচুর অবসর সময় পাবে।
এতে কেউ কেউ জঙ্গিবাদসহ নানা অপতৎপরতায় জড়াবে- এটা স্বাভাবিক। এদিকে ইউজিসি তিন সেমিস্টারের বদলে দুই সেমিস্টার পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়ে ইতিমধ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠিও দিয়েছে।
আর নতুন যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোতে শুরু থেকেই দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দিয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
তবে এ নির্দেশনা অকার্যকর করতে আটঘাট বেঁধে নেমেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা। তারা ইউজিসি’র এমন সিদ্ধান্তকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে এটি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, আমার জানা মতে প্রত্যেক সেমিস্টারে একজন শিক্ষার্থীকে আবশ্যিকভাবে তিনটি কোর্স নিতে হয়। এক সেমিস্টারে দু’টি কোর্স থাকলে ওই শিক্ষার্থী চার বছরে সব কোর্স শেষ করতে পারবে না। তারপরও কেউ যদি করে এটা আমরা সমর্থন করি না।
জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থী ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতো। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিস্টারে তিন কোর্স আবশ্যিক। তারপর তারা জঙ্গিবাদেও সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সেমিস্টার পদ্ধতির সমস্যা এটা মনে করি না।
এ ব্যাপারে ইউজিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, চারমাসে একজন শিক্ষার্থীকে দু’টি কোর্স পড়ানো হলে ওই শিক্ষার্থীর হাতে প্রচুর অবসর সময় থাকে। এই সময়ে সে জঙ্গিবাদসহ নানা খারাপ কাজে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি আমরা প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
তিনি বলেন, আমরা চিঠি দিতে দিতে ক্লান্ত। দুই সেমিস্টার চালুর জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছিলাম। উল্টো মালিকরা আমাদের নানা ধরনের হুমকি দেন। তারা নাকি তিন সেমিস্টার বন্ধ করতে পারবেন না।