রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

শুক্রবার সকালে সিঙ্গাপুর থেকে কানাডার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পূর্বে তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া আজ শনিবার ভোর রাত থেকে বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন’ বলে ‘ব্রেকিং নিউজ’ প্রচার করে।

প্রধান বিচারপতি গত ৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটিতে যান।

তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যৈষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ওয়াহ্‌হাব মিঞা।

সিনহার ফেরা না ফেরা

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল। গত রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার নতুন করে ছুটি নেওয়ার আবেদনপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে জমার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টের কোনো সূত্রও নিশ্চিত করতে পারেনি বিচারপতি সিনহা কবে ফিরবেন। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে তার কানাডা হয়ে আবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

গতকাল প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সিঙ্গাপুর থেকে কানাডার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে। কানাডায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কনিষ্ঠ মেয়ে বসবাস করছেন। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি সিনহা।

সেখানে তার বড় মেয়ে সূচনা সিনহার বাসায় বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। এরপর তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে আসেন। সেখান থেকে শুক্রবার কানাডার উদ্দেশে রওনা দেন বলে জানা গেছে। পারিবারিক ঘনিষ্ঠ এক সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।

চিকিৎসা শেষে সেখান থেকেই তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে কানাডায় যাচ্ছেন। তবে তিনি দেশে ফিরে আসবেন, নাকি পদত্যাগ করবেন এই নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। তার ফেরা-না ফেরা নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে।

এদিকে আগামী ১৩ নভেম্বর রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে একটি টিকিট বুকিং রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা তার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তার দায়িত্বে ফেরা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করবে।

এ ছাড়া একাধিক সংস্থাও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। এর মধ্যে তার বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় বিভিন্ন সংস্থার হাতে রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বিচারপতি সিনহার আর নাও ফেরা হতে পারে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র পাঠাতে পারেন। তবে কবে, কখন এই পদত্যাগপত্র জমা দেবেন— তা কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি।

বিচারপতি সিনহা শেষ অফিস করেন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে ২৪ আগস্ট। ৩ অক্টোবর আদালত খোলার আগের দিন সরকারের তরফ থেকে তার ছুটিতে যাওয়ার কথা জানানো হয়। এরপর ১৩ অক্টোবর বিমানযোগে তিনি অস্ট্রেলিয়া যান।

তার আগে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা তিনি ‘দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত’ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

৩৯ দিনের দীর্ঘ ছুটি শেষে বিচারপতি সিনহা কবে দায়িত্বে ফিরছেন— জানতে যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে উনার (প্রধান বিচারপতি) ছুটির বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই। তিনি যদি ছুটি বাড়িয়ে না নেন বা কিছু না জানান, তাহলে চলতি ছুটির পর তা অনুপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে। ’ এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো জটিলতা ঘটবে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একেবারেই না, এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নেবেন। সেখানে “অনুপস্থিতির” বিষয়টি বলা আছে। ’

আর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি শুধু এতটুকু জানি যে, উনার পক্ষে আদালতে ফিরে এসে এজলাসে বসে কাজ করা সুদূরপরাহত। ’

প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি। এ কারণে তারা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একই বেঞ্চে বসতে রাজি নন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।

এরপর ১৮ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হতে পারে। ’

 


Comments