মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের অবৈধভাবে কর্মে নিয়োগ করা হচ্ছে।
সারা দিন কাজ করিয়ে মাত্র ১৩ টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় করার মতো ঘটনা ঘটছে কক্সবাজারে।
অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, মেয়েশিশুদের জোরপূবর্ক বিয়ে ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রান্ট’ (আইওএম)-এর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে বেশ কিছু শিশু ও তাদের পরিবারের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সেখানেও শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এসব ঘটনা স্বীকার করে।
রোহিঙ্গা শিশু মুহাম্মদ যুবায়েরের বয়স ১২ বছর। সে বলে, ‘আমাকে দিনে ২৫০ টাকা করে দেয়া হবে বলে সড়ক নির্মাণের কাজে নেয়া হয়। কিন্তু ৩৮ দিন কাজ করার পর আমাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিদায় করে (দিনে ১৩ টাকা) দেয়।
শিশুটি আরও বলে, ‘আমি যখন টাকা চাইলাম তখন আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে বের করে দেয়।’
তবে ওই সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারের নাম বা কোথায় কাজ করেছে ভয়ে তা প্রকাশ করতে রাজি হয়নি যুবায়ের।
এর পর এ শিশুটি একটি চায়ের দোকানে কাজ নেয়। সেখানে চার ঘণ্টার বিরতি দিয়ে আট ঘণ্টা করে দুই দফায় ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাকে।
যুবায়ের জানায়, এ দোকানে এক মাস কাজ করার পর তাকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি।
দোকানটির মালিক দোকানের বাইরে যেতে দিত না। পরে যুবায়ের পালিয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে চলে যায়।
যুবায়ের বলে, আমাকে যখন কোনো টাকা দেয়নি তখন আমি পালিয়ে ক্যাম্পে চলে যাই। আমি খুবই ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ দোকান মালিক এসে আমাকে আবার ধরে নিয়ে যেতে পারে।
মাত্র ১১ বছরের একটি মেয়েশিশুকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে বলে আইওএমের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে এর সত্যতা পাওয়ার কথা জানায় রয়টার্স।
শিশুটিকে বিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে তার বাবা-মা রয়টার্সকে বলেন, যাদের কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা আমাদের এখানে থাকার জন্য সুযোগ-সুবিধা দেবে। আর্থিকভাবেও সুবিধা দেবে তারা।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে ৫৫ শতাংশ শিশু, যার পরিমাণ সাড়ে ৪ লাখের ওপরে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সহকারী পুলিশ সুপার আফজুরুল হক টুটুল রয়টার্সকে জানান, ক্যাম্পের আশপাশের ১১টি চেক পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে শিশুদের ক্যাম্প থেকে বাইরে যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, যদি কোনো রোহিঙ্গা শিশুকে কোথাও কাজ করতে দেখা যায়, তা হলে সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকের শাস্তি হবে।