কুড়িগ্রামে কাগজে-কলমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাড়া করে অংশগ্রহণ করানো হচ্ছে পিইসি পরীক্ষায়। বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব না থাকলেও শিক্ষা প্রশাসন তদারকি না করেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রত্যেক বছর বিনামূল্যের বই বিতরণ করে আসছে।
এছাড়া এসব বিদ্যালয়ের নামে শতভাগ অংশগ্রহণ দেখিয়ে অসাধু কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন অবৈধ অর্থ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চলতি পিইসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় সরকারপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হিসেবে ৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। অথচ ৬ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
কিছু অসাধু কর্তকর্তা এবং স্থানীয় সুযোগসন্ধানীরা। যোগসাজসের মাধ্যমে ২০১৫ সালে থেকে কাগজ কলমে পিইসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে আসছে।
নিয়মিত সরকারের দেয়া বিনামূল্যের বই উত্তোলন করা হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নামে যা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে রমনা ইউনিয়নের সরকার পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল সাইন বোর্ড ছাড়া বিদ্যালয়ের কোনো চিহ্ন নেই।
বিদ্যালয়ের নামকরণের টিনশেড ঘরটিতে একজন ভাড়াটিয়া রয়েছেন প্রায় ৬ বছর থেকে। বিদ্যালয়ের কক্ষে গিয়ে দেখা যায় ব্রেঞ্চ, টেবিল, চেয়ার কিংবা পাঠদান কার্যক্রমের পরিবর্তে রয়েছে বসবাসের জন্য খাট, টেবিল, সোফা এবং রান্নার উপকরণ। শতভাগ পাস দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের জন্য ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের।
পার্শ্ববর্তী শরীফের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিইসি কেন্দ্র সচিব আফরোজা বেগম বলেন, সরকারপাড়া বেসরকারি বিদ্যালয়সহ ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী অংশ নিচ্ছে।
এরমধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৭৮ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দিনের ইংরেজি পরীক্ষায় ৩৭ জন অনুপস্থিত রয়েছে।
সরকারপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান জানান, গ্রামের মৃত আবদুল হাই সরকারের দেয়া ৩৮ শতক জমিতে ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করা হয় সরকারপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। অর্থ না থাকায় বিদ্যালয়টি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি।
এলাকার আবদুল হামিদ, আবদুল আল মামুন লাকি আক্তার জানান, প্রায় ৬ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ক্লাস বন্ধ আছে। যারা পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তারা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। শতভাগ পাস দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের জন্য টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়া হয়। সরকারপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক নুরজাহান বেগম নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অস্বীকার করেন। কিন্তু প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীর বিবরণীতে তাকে প্রধান শিক্ষক দেখানো হয়েছে। এ প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এছাড়া তিনি জানান, নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হাজিরা, পাঠদান চলছে। তার বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি সটকে পড়েন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দাবিদার আমজাদ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ে ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পিইসি পরীক্ষায় সিস্টেমের মাধ্যমে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে যাননি। তবে গাফিলতির অভিযোগ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর চাপিয়ে দেন তিনি।