বন্যা ও ভারি বর্ষণে কিছু কিছু এলাকায় রোপা আমন আবাদ ব্যহত হলেও শরীয়তপুরে বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রোপা আমন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে দামও বেশি পাওয়ায় সন্তুষ্ট কৃষকরা।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ছয়টি উপজেলায় ৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৭৯ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৩৩৯ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ২৪৬ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় এক হাজার ৬০৩ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় এক হাজার ৮০০ হেক্টর ও গোসাইরহাট উপজেলায় তিন হাজার ৯৫২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রোপা আমন ৪৭০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়।(জাগো নিউজ থেকে)

বন্যা ও ভারি বর্ষণে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ও উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নসহ কিছু কিছু এলাকায় রোপা আমনে চিটা দেখা দিলেও জেলার অন্য উপজেলায় রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।

জেলার ছয়টি উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোপা আমন জমি থেকে কেটে প্রতি মণ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি মণ রোপা আমন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। যা গত বছরের তুলনায় বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দরে।

শরীতপুর সদর উপজেলার কুড়াশি গ্রামের কৃষক লাল চাঁন সরদার বলেন, এ বছর রোপা আমন ধান ভালো হয়েছে। আমরা এখন ধান কাটায় ব্যস্ত। বাড়ির নারীরাও আমাদের সহযোগিতা করছে।

ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের ছাতিয়ানি গ্রামের কৃষক খোকন সরদার জানান, এ বছর তিনি ৮ একর (৮০০ শতাংশ) জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। ৮ একর জমিতে ধান চাষ করতে তার ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

কৃষক খোকন সরদার বলেন, ৮ একর (৮০০ শতাংশ) জমিতে রোপা আমন পেয়েছি ২০০ মণ। যার আনুমানিক মূল্য এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতে সমস্ত খরচ দিয়ে তার ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি দুই শতাংশে লাভ হবে ১০৬ টাকা। এছাড়াও ৮ একর (৮০০ শতাংশ) জমির রোপা আমন ধানের খড় বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকার মত আসবে বলেও জানান তিনি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নের চৌধুরীকান্দি গ্রামের কৃষক রাহিমা খাতুন জানান, তিনি ১৬০ শতাংশ জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। বেশির ভাগ ধানই চিটা হয়ে গেছে। এতে তাদের খরচের কোনো টাকা ঘরে উঠবে না। তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।

একই গ্রামের মুরশিদা বেগম, মান্নান বেপারী জানান, এবার ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দিয়েছে।

গোসাইরহাট উপজেলার গোসাইরহাট ইউনিয়নের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর রোপা আমন চাষ ভালো হয়েছে। ভালো দামও পাচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। আশা করছি এবার ধান বিক্রি করে কৃষিঋণ পরিশোধ করতে পারব।

আংগারিয়া বাজার পাইকারি ধান ব্যবসায়ী মো. মতিউর রহমান খান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের দাম বেশি। কৃষকদের কাছ থেকে আড়তের মাধ্যমে পাইকাররা ধান কেনেন। আড়তের খাজনা ও যাতায়াতের ভাড়া দিয়ে আমাদের মণ প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম পড়ে যাচ্ছে।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. রিফাতুল হোসাইন বলেন, জেলায় এ বছর ৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে।

এ বছর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ঝড়ো হাওয়া একটু বেশি হয়েছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ও উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নে দেড়িতে রোপা আমন রোপণ করায় কিছু কিছু ধানে চিটা দেখা দিলেও জেলায় এ বছর রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।

 


Comments