অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্ন ষষ্ঠ অধ্যায় : জীবে পরিবহন
উদ্দীপক : হাসান সাহেবের বয়স ৫০। তিনি একটি আর্থিক ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
কিছুদিন যাবৎ তিনি মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় ও অস্থিরতা অনুভব করছেন। অন্যদিকে তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়ে মুনের শরীরের গিঁটে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, ত্বকে লালচে ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা দুজন ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
ক) রক্ত কী?
খ) শ্বেতকণিকা কিভাবে দেহকে রক্ষা করে? বুঝিয়ে লেখো।
গ) হাসান সাহেবের সমস্যাগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যা দুটির মধ্যে কোনটি অনিরাময়যোগ্য, যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ক) রক্ত এক ধরনের ক্ষারীয়, ঈষৎ লবণাক্ত, লালবর্ণের তরল যোজক টিস্যু।
খ) শ্বেত রক্তকণিকা ক্ষণপদ সৃষ্টির মাধ্যমে রোগজীবাণু ভক্ষণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার নাম ফ্যাগোসাইটোসিস।
শ্বেত রক্তকণিকা দেহে প্রহরীর মতো কাজ করে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ধ্বংস করে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে দেহকে রক্ষা করে।
গ) হাসান সাহেব কিছুদিন যাবৎ মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় ও অস্থিরতা অনুভব করছেন। এই সমস্যা উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে হয়ে থাকে।
নিম্নলিখিত কারণে হাসান সাহেবের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে—
১। বাবা বা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তাঁদের সন্তানদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
২। যাঁরা স্নায়বিক চাপে বেশি ভোগেন অথবা ধূমপানের অভ্যাস আছে, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
৩। দেহের ওজন বেশি বেড়ে গেলে
৪। খাদ্যে লবণ ও চর্বিযুক্ত উপাদান বেশি থাকলে
৫। পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের পূর্ব ইতিহাস থাকলে
ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যা দুটির মধ্যে হাসান সাহেবের সমস্যাটি হলো উচ্চ রক্তচাপ আর তাঁর মেয়ে মুনের সমস্যাটি হলো বাতজ্বর।
হাসান সাহেবের সাধারণত সিস্টোলিক চাপ ১২০ এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৮০ বা এর নিচের মাত্রায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রার বেশি হয়েছে। তাই তাঁর উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে। তিনি স্নায়বিক চাপে বেশি ভোগেন। তিনি ধূমপান করেন। তাঁর দেহের ওজন বেশি হয়েছে। তিনি লবণ ও চর্বিযুক্ত খাদ্য বেশি খান।
তাঁর মাথা ব্যথা, বিশেষ করে মাথার পেছন দিকে ব্যথা করা, মাথা ঘোরা, ঘাড় ব্যথা করা, বুক ধড়ফড় করে। মাঝে মাঝে দুর্বলতা বোধ করেন। তাঁর সুনিদ্রা হয় না এবং অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠেন। তাঁকে টাটকা ফল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাঁকে ওজন কমানোর জন্য শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে, যা স্ট্রোক নামে পরিচিত।
হাসান সাহেবের মেয়ে মুনের বাতজ্বর হয়েছে। স্ট্রেপটোকক্কাস অণুজীবের সংক্রমণে বাতজ্বর হয়। এতে শ্বাসনালির প্রদাহ, ফুসকুড়িযুক্ত সংক্রামক জ্বর, টনসিলের প্রদাহ অথবা মধ্যকর্ণের সংক্রামক রোগ বাতজ্বরের লক্ষণ। সাধারণত শিশুকালেই এ রোগের আক্রমণ শুরু হয় এবং দেহের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ড।
হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী সময়ে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং ত্বকে লালচে রং দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে পেনিসিলিনজাতীয় ওষুধ যথাযথভাবে প্রয়োগে বাতজ্বর থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। কারো উচ্চ রক্তচাপ হলে সে যদি কিছু নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে মেনে চলে, তবে তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু এই নিয়মগুলোর ব্যতিক্রম ঘটলে যেকোনো সময় আবার রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়যোগ্য নয়। উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে বাতজ্বর নিরাময়যোগ্য এবং উচ্চ রক্তচাপ অনিরাময়যোগ্য।
উদ্দীপক : মাহফুজের রক্তে শ্বেত কণিকার পরিমাণ বেড়ে গেছে। হাতে আঘাত পাওয়ায় সে লক্ষ করল, তার কাটা স্থানের রক্ত সহজে জমাট বাঁধছে না।
ক) রক্তরস কী?
খ) Rh ফ্যাক্টর বলতে কী বোঝায়?
গ) মাহফুজের রক্তে শ্বেত কণিকার বৃদ্ধি কিরূপ রোগের সৃষ্টি করবে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ) তার কাটা স্থানের ওই অবস্থার সঙ্গে একটি রক্তকোষ জড়িত—যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
ক) রক্তের বর্ণহীন তরল অংশকে রক্তরস বলে।
খ) রক্তের রেসার্স ফ্যাক্টর (Rh ফ্যাক্টর) : মানুষের লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লিতে রেসার্স বানরের লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লির মতো এক ধরনের অ্যান্টিজেন রয়েছে। রেসার্স বানরের নামানুসারে ওই অ্যান্টিজেনকে রেসার্স ফ্যাক্টর বা Rh ফ্যাক্টর বলে। জয ফ্যাক্টরবিশিষ্ট রক্তকে Rh+ এবং Rh ফ্যাক্টরবিহীন রক্তকে Rh বলে। একজন Rh মহিলার সঙ্গে Rh+ পুরুষের বিয়ে হলে তাঁদের প্রথম সন্তান হবে Rh+; কিন্তু তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান ভ্রূণেই মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গ) মাহফুজের শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্বেত রক্তকণিকার আকার অনিয়মিত, বড় ও সংখ্যায় লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে অনেক কম।
শ্বেত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস আছে, কিন্তু রং নেই। শ্বেত রক্তকণিকা দেহে প্রহরীর মতো কাজ করে। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ধ্বংস করে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে লিউকেমিয়া রোগ হয়।
দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, পায়ের গিঁটে ব্যথা হয়ে ফুলে ওঠা, লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, রোগী দুর্বল বোধ করা, হাত বা পা কাঁপতে থাকা, দেহত্বকে ছোট ছোট লাল বর্ণের দাগ হওয়া ইত্যাদি লিউকেমিয়া রোগের লক্ষণ।
বর্তমানে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ নির্ণয় করা গেলে এবং রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব। সাধারণত অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়।
ঘ) মাহফুজের হাতের কাটা স্থানের রক্ত জমাট বাঁধছে না। অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অণুচক্রিকা আকারে ছোট, বর্তুলাকার ও বর্ণহীন। এরা গুচ্ছাকারে থাকে। প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার অণুচক্রিকা থাকে।
অস্থিমজ্জার মধ্যে এগুলি তৈরি হয়। এদের গড় আয়ু পাঁচ থেকে ১০ দিন। কোনো রক্তবাহী নালির ক্ষতি হলে এরা অনতিবিলম্বে থ্রোম্বোপ্লাস্টিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য নিঃসরণ করে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
রক্তে উপযুক্ত পরিমাণ অণুচক্রিকা না থাকলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। ফলে বহু সময় রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, মাহফুজের হাতের কাটা স্থানের সৃষ্ট অবস্থার সঙ্গে রক্তের একটি কোষ—অর্থাৎ অণুচক্রিকা জড়িত।