রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় গতকাল রোববার। প্রথম দিন শেকল বাঁধা পা নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী। তাঁর শেকল বাঁধা পা দেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে অনেকের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টা। এ-ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট দিয়ে পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ভিড়ে শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসনের লোকজন।

এমন সময় হঠাৎ দুই পায়ে শেকল বাঁধা এক পরীক্ষার্থী সবার নজরে কাড়ে। পায়ে শেকল বাঁধা দেখে শুরু হয় প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদ।

জিজ্ঞাসাবাদের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ফরিদুল ইসলামের হস্তক্ষেপে শেকল পরা অবস্থাতেই ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়। এ সময় সহকারী প্রক্টর ড. শফিক আশরাফ ছেলেটিকে পরীক্ষার হল পর্যন্ত হেঁটে পৌঁছে দেন।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার একটি গ্রামের এক কৃষক বাবার ছেলে ওই শিক্ষার্থী।

পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে থাকা ওই শিক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর ছেলে খুব মেধাবী ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে মেধাতালিকায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। প্রায় ছয় মাস আগে থেকে হঠাৎ অদ্ভুত আচরণ করতে থাকেন তিনি। পরে তাঁকে ডাক্তার দেখানো হয়।

ডাক্তার অতিরিক্ত টেনশন ও ঘুম কম হওয়ার ফলে তাঁর মস্তিষ্কে কিছু সমস্যা হয়েছে বলে জানান। সে যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্যই তাঁর পায়ে শেকল দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসক জানান, অধিক রাত জেগে পড়াশোনা করায় ওই শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে সমস্যা হয়েছে। যে কারণে তিনি মানিসক সমস্যায় ভুগছেন।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা আরো জানান, তাঁর ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার সময় পড়াশুনা নিয়ে অনেক টেনশনে ছিল। জেদি স্বভাবের হওয়ায় অনেক রাত জেগে পড়াশুনা করতেন। এরপর থেকেই তাঁর এই সমস্যা দেখা দেয়।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল সে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। এখনো পড়াশুনার প্রতি তাঁর আগ্রহ অনেক বেশি। আমার বিশ্বাস, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবান করবে।’

ওই ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার স্বপ্ন একদিন অনেক বড় হবো আমি। দেশের সেবা করবো। আমার মানসিক সমস্যার কারণে পরিবারের লোকরা পায়ে শেকল পরে রেখেছে।’

 


Comments