বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত আইনে উপাচার্যের যে কোনো কাজের জবাবদিহি উপাচার্যের কাছেই দিতে হবে, অর্থাৎ উপাচার্যের বিচার উপাচার্যই করবেন মর্মে সুপারিশ করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির '১ নম্বর সাব-কমিটি'র প্রস্তাবিত নতুন আইনের খসড়ার ১৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভাপতি হবেন। আবার ৩১(৮) ধারায় বলা হয়েছে, উপাচার্য তার কাজের জন্য সিন্ডিকেটের কাছে দায়ী থাকবেন। অর্থাৎ উপাচার্য নিজের কাজের জবাব দেবেন নিজের কাছেই।

জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো অনুদান বা অর্থ সহায়তা না দিলেও বেশ কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ পরিবর্তন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির '১ নম্বর সাব-কমিটি' নতুন আইনের একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। যেখানে পুরাতন আইনের কিছু ধারায় সংযোজন ও বিয়োজন করে খসড়া আইন জমা দেওয়া হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির ২৪তম বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রস্তাবিত নতুন আইনের ১৭(ক) ধারা ও ৩১(৮) ধারা সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনায় একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকে, বিদ্যমান আইনে উপাচার্যের কাজের জবাবদিহি সেই বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কাছেই রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে সেটা সিন্ডিকেটে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটের সভাপতি উপাচার্য নিজেই।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, বিদ্যমান আইনে যেটা আছে, সেটা থাকাকেই তারা ভালো মনে করেন। কারণ, উপাচার্যকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সিন্ডিকেটে সরকার মনোনীত আরও সদস্য থাকেন।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে তারা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। সামনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকেও তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সাবেক সহসভাপতি এবং ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাসেম হায়দার সমকালকে বলেন, বিদ্যমান আইনে উপাচার্যের জবাবদিহি সিন্ডিকেট এবং ট্রাস্টি বোর্ড উভয়ের কাছেই রয়েছে। যে কোনো সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট হয়ে তার পরে বোর্ডে যায়। তাই আইনের সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, এ আইন পরিবর্তন হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তার চরিত্র হারাবে; এটা তো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নয়। বরং আইনে পরিবর্তন আনলে সেটা সাংঘর্ষিক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে উপাচার্যকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

এখন যদি উপাচার্যের জবাবদিহি সিন্ডিকেটের কাছে যায়, তাহলে সিন্ডিকেটের সুপারিশের ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগের প্রশ্নটিও এসে যায়। অর্থাৎ উপাচার্যের নিয়োগ উপাচার্য নিজেই দেবেন, যা অত্যন্ত সাংঘর্ষিক।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা শিক্ষা বিস্তারের মহৎ উদ্যোক্তা। কিন্তু উপাচার্যদের জবাবদিহি সিন্ডিকেটের কাছেই থাকা উচিত।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সিন্ডিকেটে সভাপতিত্ব করলেও তাদের সিন্ডিকেটের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। তাই সংসদীয় কমিটির সুপারিশ সাংঘর্ষিক হবে না।

 


Comments