৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ। চারদিকে মুসলমানদের জয় জয়কার। মুসলমানদের আদর্শে অভিভূত হয়ে ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে অন্য ধর্মের মানুষ। এ সময় জেরুজালেমও মুসলমানদের অধিকারে আসে। জেরুজালেমের দায়িত্বে ছিলেন যাজক সোফ্রোনিয়াস।

তিনি বাইজেন্টাইন সরকারের প্রতিনিধি ও স্থানীয় খ্রিস্টান গীর্জার প্রধান যাজক। সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) এবং আমর ইবনুল আস (রা.) এর নেতৃত্বে জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে আসে। তারা খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর (রা.)-র কাছে আত্মসমর্পণ করবে। তাছাড়া অন্য কারো কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

এমন পরিস্থিতিতে হযরত ওমর (রা.) তার এক ভৃত্যকে সঙ্গে নিয়ে জেরুজালেমের পথে রওনা দেন। দুজনের যানবাহন ছিল একটি মাত্র উট। তাই পালা করে ওমর (রা.) এবং ভৃত্য উটে চড়তেন।

ওমর (রা.) যখন উটে চড়তেন তখন ভৃত্যটির হাতে থাকত উটের রশি আর ভৃত্যটি যখন উটে চড়তেন তখন ওমর (রা.) এর হাতে থাকত উটের রশি। এভাবেই তারা জেরুজালেমের কাছে পৌঁছেন।

অবস্থা হল এই ওমর (রা.) জেরুজালেম শহরে প্রবেশের দাড়প্রান্তে। ২২ লক্ষ বর্গ মাইলের বিশাল সাম্রজ্যের খলিফাতুল মুসলিমীনের হাতে উটের রশি। উটের উপর বসে আছেন ভৃত্য।

ওমর (রা.) এর গায়ে অতি সাধারণ জামা। চৌদ্দটি তালি জামায়! মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) খলিফাতুল মুসলিমীনের গায়ে অতি সাধারণ, চৌদ্দটি তালিযুক্ত জামা। উটের রশি ধরে টানছেন মুসলিম বিশ্বের খলিফা। আর ভৃত্য বসে আছেন উটের উপর। এটা দেখে রোমানরা কি মনে করবে!

এসব ভেবে তিনি বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আমরা এমন এক জায়গায় আছি, যেখানের লোকেরা চাকচিক্য পছন্দ করে। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য দেখে মানুষের মর্যাদার বিচার করে। তাই আপনি যদি একটু ভালো পোষাক পরতেন। তাহলে তা কতোই না উত্তম হতো !

হযরত ওমর (রা.) আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) এর কথায় রেগে গেলেন। তাঁর বুকে আঘাত করলেন। আর বললেন, আমি তোমার পক্ষ থেকে এই কথাগুলো আশা করিনি।

এরপর হযরত ওমর (রা.) বললেন,“আমরা হচ্ছি সেই জাতি যাদের মহান আল্লাহ ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আমরা যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন উপায়ে সম্মান খুঁজি তাহলে মহান আল্লাহ আমাদের অসম্মানিত করবেন”

 


Comments