বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইন মানতে বাধ্য করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে সেগুলোতে পর্যবেক্ষক মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০১৬) এ সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ সংবলিত এ প্রতিবেদনটি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে— ইউজিসির একজন সদস্য অথবা কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যূন ২০ বছরের শিক্ষকতাসহ গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে— এমন একজন শিক্ষাবিদকে কমিশন কর্তৃক পর্যবেক্ষক মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নের লক্ষ্যে এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ এর সংশোধনী আনা যেতে পারে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের আইনের কোনো তোয়াক্কা করে না। তারা বছরের পর বছর ইউজিসিতে আর্থিক প্রতিবেদনও জমা দেয় না।
তাদের আইনের মধ্যে পরিচালিত করতেই এমন সুপারিশ করেছে ইউজিসি। তিনি বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ সুপারিশ নয়। যাদের বিরুদ্ধে আইন না মানার অভিযোগ, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ— তাদের জন্যই ইউজিসি এমন প্রস্তাবনা দিয়েছে।
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অডিট রিপোর্ট দাখিল করছে না।
অথচ আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানসমূহের (সিএ ফার্ম) মধ্য হতে সরকার কর্তৃক মনোনীত একটি ফার্ম দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষা করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে আর্থিক অডিট রিপোর্ট দাখিলযোগ্য ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অডিট রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠিয়েছে। এসব অডিট রিপোর্টে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করেনি।
এ ছাড়া ২০১৫ সালে অডিট রিপোর্ট দাখিলযোগ্য ৮০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আর্থিক প্রতিবেদন ইউজিসিতে পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করেছিল।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অডিট রিপোর্ট দিচ্ছে সেগুলোতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসছে না বলে অভিযোগ ইউজিসির। কারণ, সিএ ফার্ম মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি অডিট ফার্মের প্রস্তাব করলে সরকার একটি ফার্মকে মনোনয়ন দেয়।
অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তালিকা থেকেই একটি ফার্মকে বাছাই করতে হয়। এর ফলে আর্থিক বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সঠিক তথ্য পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিরপেক্ষ কোনো ফার্ম নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষা করানোর সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
মঞ্জুরি কমিশন বলছে— বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে আগ্রহী নয়। অথচ জবাবদিহিতা ও আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য এটি অপরিহার্য।
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো ৮৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতিকর্তৃক নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ পূরণ করেছে। এটি খুব উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জোর তাগিদ দিতে সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।