সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের রাজপ্রাসাদ লক্ষ্য করে ইয়েমেনের হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়েমেন থেকে হুথি বিদ্রোহীরা ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও সৌদি আরব তা আকাশেই বিধ্বস্ত করে দেয়।
ফলে কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তার শিহরণ বয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। খবর স্কাই নিউজ, বিবিসি ও প্রেস টিভির।
ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরুর এক হাজারতম দিনে মঙ্গলবার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। গত এক হাজার দিনে অন্তত ১২ হাজার ইয়েমেনিকে হত্যা করেছে সৌদি আরব।
অর্থাৎ গত আড়াই বছরে দিনে গড়ে ১২ জন মুসলমানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সৌদি আরব।
গত মাসে রিয়াদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। সেই ক্ষেপণাস্ত্র ইরান সরবরাহ করেছিল বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
এ অবস্থার মধ্যে নতুন করে ওই হামলা চালানো হয়েছে। ওদিকে এ ঘটনা নিয়ে ধারণ করা একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দৃশ্যত সৌদি সরকারই ভিডিওটি তৈরি করেছে বলে মনে হয়। তাতে দু’পক্ষের মধ্যে উন্মুক্ত যুদ্ধের দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
ইয়েমেনের ন্যক্কারজনক গৃহযুদ্ধে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। তারা লড়াই করছে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে। হুথিদের আবার সমর্থন দিচ্ছে ইরান।
তবে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বিমান হামলা চালিয়ে এত্ত মানুষ হত্যা করার পরও সেই হুথিদের কিন্তু নিবৃত্ত করতে পারেনি।
হুথিরা বলেছে, তারা সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ধারণা করা হয়, তাদের কাছে পুরনো আমলের স্কাড-স্টাইলের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ রয়েছে। তবে হুথিদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ অস্বীকার করছে ইরান।
ইয়েমেন থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে হুথিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটিতে ইরানের সরবরাহ করা অস্ত্রের ছাপ আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি।
বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া এক বক্তব্যে হ্যালি তেহরানের কর্মকাণ্ড বিশ্বকে ‘বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের মুখে ঠেলে দেবে’ বলে সতর্ক করেন। হ্যালি বলেন, ‘আগের হামলাগুলোতে ইরানের সরবরাহ করা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলোর সব ধরনের ছাপ’ এ ক্ষেপণাস্ত্রেও ছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘তেহরান সরকারের অপরাধ সবার সামনে নিয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা দরকার। তারা যাতে এ বার্তাটি পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাও নেয়া উচিত। যদি আমরা তা না করি, তাহলে ইরান বিশ্বকে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের অতলে নিয়ে যাবে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত তেহরানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদ কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে সে সম্পর্কে একটি তালিকা দিয়েছেন। কিন্তু ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা রাশিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, বিষয়টিতে তারা সমর্থন দেবে না।
এদিকে হুথি যোদ্ধারা ঘোষণা করেছেন, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সব প্রাসাদ তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যে রয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত একটি সৌদি রাজপ্রাসাদ লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর এ ঘোষণা দিল আনসারুল্লাহ আন্দোলন।
হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলনের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সৌদি রাজার প্রাসাদগুলোর পাশাপাশি দেশটির সব তেল ও সামরিক স্থাপনা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যে রয়েছে।