সিংহের শরীর আর মানবমস্তক বিশিষ্ট এক অদ্ভুত সৃষ্টি... ২৪১ ফুট লম্বা, ২০ ফুট চওড়া এবং প্রায় সাড়ে ৬৬ ফুট উঁচু এই বিশাল ভাস্কর্য যার পায়ের থাবার দৈর্ঘ্যই ৫০ ফুট... যীশু খ্রীষ্টের জন্মের ২৫০০ বছর আগে ফারাও সম্রাট 'খাফরে' তার শাসনামলে এই 'গ্রেট স্ফিংস' নির্মাণ করেন যার মুখমণ্ডলের অবয়ব সম্রাট 'খাফরে'র মতো...
পিরামিডের পাশাপাশি এই স্ফিংস দর্শন প্রত্যেক পর্যটকের ফরজ দায়িত্ব... পিরামিড দর্শনে আমার মুখটা যেমন 'হা' হয়ে গিয়েছিল, স্ফিংস দেখে সেই 'হা' আরও বিস্তৃত হলো... 'এটা কি দেখছি আমি..! এতো বিশাল..!'
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মনোলিথিক ভাস্কর্যের সামনে দাড়িয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম... সাড়ে চার হাজার বছর আগে কিভাবে সম্পন্ন হলো এই প্রাচীনতম স্বারক ভাস্কর্যের নির্মাণ..! এটি এখনো এক রহস্য...
আমি মুগ্ধ হয়ে স্ফিংস এর বিশালতা অনুভব করছি আর সঙ্গী বন্ধুটির কাছে 'জ্ঞান' পরিবেশন করছি.., হঠাৎ বিরক্ত ভঙ্গিতে বান্ধবী Ditan বলে উঠলো- 'এই শাওন তোর স্ফিংস এর নাক কই গেল..?'
আমি এবার জ্ঞানের ভান্ডার খুলে বসলাম... তাকে জানালাম-
'কথিত আছে- গ্রেট স্ফিংস এর ১ মিটার লম্বা নাকটি খসে পড়েছে নেপোলিয়ন এর সৈন্যদের কামানের গোলায়... (কিন্তু নেপোলিয়নের জন্ম সাল ১৭৬৯... অন্যদিকে ১৭৫৭ সালে প্রকাশিত এক স্কেচেও স্ফিংসকে নাসিকাবিহীন অবস্থায় দেখা যায়!)'
বান্ধবী মোটামুটি ইমপ্রেসড... আমি আরও জ্ঞান প্রদান শুরু করলাম...
'স্ফিংস এর যে একটি লেজ আছে জানিস..?'
বান্ধবী বলল-
'সিংহের তো লেজ থাকবেই...'
আমরা দু'জন গ্রেট স্ফিংস এর গুটানো লেজটা দেখলাম...
'স্ফিংস এর দাঁড়িটা কোথায় বলতো..?'
বান্ধবীকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম আমি... 'ইনার দাঁড়িও ছিল নাকি..! ঐ যে কামানের গোলায় নষ্ট হয়ে গেছে হয়তো...'
'হুম দাঁড়ি ছিল... ফারাও রাজারা ভিন্ন ভিন্ন উৎসবে দাঁড়ি লাগাতেন... তারই প্রতিকৃতি স্বরূপ স্ফিংসের চুনাপাথরে নির্মিত দাঁড়ি ছিল যা খসে পড়ে যাওয়ার পর ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে...'
এইবার বান্ধবী আমার বিদ্যায়, জ্ঞানে মুগ্ধ...
'আমি না অবাক হয়ে যাই... তুই এতো কিছু মনে রাখিস কি করে শাওন..!'
আমি 'আহ্লাদে গদগদ' টাইপ একটা হাসি দেই... কিন্তু তাকে একদম বলিনা যে পিরামিড আর স্ফিংস দেখব বলে সেদিন সকালেই পুরোনো জানার সঙ্গে নতুন করে আরও কিছু জানবো বলে 'গুগল' আপা'র সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়েছি...
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)