মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর নতুন দফতরে যোগ দিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।
রোববার তারা নিজ নিজ দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার যোগ দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব হারানো তারানা হালিম ৩ দিন পর রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের ৮০১ নম্বর কক্ষে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
পরে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কার্যালয়ে যান প্রতিমন্ত্রী তারানা। মন্ত্রীও তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে প্রতিমন্ত্রী তথ্য অধিদফতরের (পিআইডি) সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তথ্যমন্ত্রী ইনুসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। তারানা বলেন, দফতর বদল নিয়ে ‘অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।’ ১৬ মিনিট ধরে তিনি টেলিযোগাযোগ বিভাগে তার সময়ের বিভিন্ন সফলতার চিত্র তুলে ধরলেও ওই বিভাগ নিয়ে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
তারানা বলেন, ‘আমি মনে করি একটি চ্যালেঞ্জিং মিনিস্ট্রি থেকে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় আরেকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ আমাকে দিয়েছেন (প্রধানমন্ত্রী)। আমি কোনোভাবেই মনে করি না এখানে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ আছে। কাজ করলে সব জায়গাতেই করা যায়।’
২ জানুয়ারি চারজন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেয়ার পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজনের দফতর পুনর্বণ্টন করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তারানা হালিমকে করা হয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী। অভিনেত্রী-সংস্কৃতিকর্মী তারানা প্রায় ৩ বছর আগে যোগ দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে। ওই মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন কোনো মন্ত্রী ছিল না।
এখন তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করবেন মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে। নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বৃহস্পতিবার নতুন দফতরে যোগ দিলেও তারানা হালিম সেদিন অফিসে না যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে টেলিযোগাযোগের দায়িত্ব পাওয়া নতুন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বুধবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘টেলিকম ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রী সেখানে আর নেই, কেন নেই আমি তা বলব না।’
টেলিকম মন্ত্রণালয়ের এত দিনের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে নতুন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি ধারণা করতে পারিনি যে টেলিকম ডিভিশনে ক্যান্সারের মতো সমস্যা বিরাজ করে, আর তা সমাধান করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’
গত ৪ বছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তারানা হালিম বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আগের মন্ত্রণালয় সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না করলে খুশি হব। কারণ আমি আরেকটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।
কাজেই ওই মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে জবাবদিহিতার যেটুকু জায়গা আমি করেছি তার বাইরে কিছু বলা শোভন হবে না। আর আমাকে দিয়ে সেই অশোভন কাজটি আপনারা করাবেন না বলেই আমি বিশ্বাস করি।’ টেলিযোগাযোগ বিভাগ হারানোয় সাংবাদিকদের কষ্টের কথা বলেছিলেন তারানা। এ দফতর বদলের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে তারানা বলেন, ‘গণমাধ্যমে যারা সংবাদ উপস্থাপন করেন, তারা বিভিন্নভাবে করেন।
আমি এটুকু বলতে চাই, সত্যিকার অর্থে সেই বিভাগ সম্পর্কে আমি একটি কথাও বলব না।’ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘সেই বিভাগ থেকে এ বিভাগে এসেছি। আমার কি কোনো রকমের এখতিয়ার আছে সেই বিভাগ সম্পর্কে কথা বলার? এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ ছোটবেলা থেকেই করিনি। অশোভন কথা বলাও শিখিনি। আমি আমার শোভন থাকার মাত্রা কোনোভাবেই অতিক্রম করতে চাই না।’
টেলিযোগাযোগ দফতর হারানোয় তারানা একটি অনলাইন পোর্টালকে বলেছিলেন, মানুষ হিসেবে বিষয়টি তার ‘গায়ে লেগেছে’। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা পুরোটা পড়ে দেখলেই পেয়ে যাবেন। আপনারা কিছু কায়দা জানেন, পুরো সংবাদের চারটি লাইন, কোনটা লিখলে মানুষ পড়ে। ওই কথাটা ছিল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে।
প্রশ্ন করা হয়েছিল, উৎক্ষেপণের সময় আপনার কেমন লাগবে, আপনি থাকবেন না- সেটির স্বাভাবিক একটি উত্তর ছিল। আমি খুব সচেতনভাবে কথা বলি।’ এরপর উদাহরণ হিসেবে তারানা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিবারাত্র পরিশ্রম করে কমিউনিটি ক্লিনিক করলেন, খালেদা জিয়া এসে বন্ধ করে দিলেন। তখন তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হওয়ায় কেমন লেগেছে- এ রকম জিনিস আরকি।’
এক সময়ের জনপ্রিয় এ টিভি অভিনেত্রী বলেন, ‘একটা জিনিস মনে রাখি সবাই- ছোট করলে আর বড় করা যায় না। আমি আসলেই কাউকে ছোট করব না, কখনোই না। আমি মনে করি, কাউকে ছোট না করে সবাই একসঙ্গে কাজ করি, আমরা তো মানুষের জন্য- নৌকা মার্কার জন্য কাজ করতে এসেছি, সেভাবেই কাজ করে যাব।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের গত ৪ বছরের অর্জনগুলো তুলে ধরে তারানা বলেন, এর মধ্যে যা কিছু সাফল্য, তা সরকারের সাফল্য, শেখ হাসিনার সাফল্য। আর কোনো ব্যর্থতা থাকলে তা তারানা হালিমের। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ওই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী, এটা মনে রাখতে হবে আমাদের।
প্রধানমন্ত্রী যেখানে দেবেন, সেখানেই সততার-দক্ষতার সঙ্গে কাজ করব, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে করব।’ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মতবিনিময় অনুষ্ঠানের শুরুতে তার স্বাগত বক্তব্যে তারানা হালিম সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি আমাদের মতো রাজপথের সৈনিক ছিলেন, সরকার পরিচালনা ও মন্ত্রিপরিষদে সরকার চালানোয় আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছি। আমি জানি, তিনি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের চালেঞ্জিং কাজ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, এজন্য গর্ববোধ করি।
আমরা একসঙ্গে তথ্য মন্ত্রণায়ের কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে সক্ষম হব।’ ওদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। সরকারি পরিবহন পুল ভবনে প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এ সংবর্ধনার অয়োজন করে। এছাড়া পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। একইভাবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে জানিয়েছেন, রোববার নতুন পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তার দফতরে যোগ দিয়েছেন।