নিহত এক শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন বাবা-মা।
এ হামলায় আমির নামে তাদের আরও এক শিশু সন্তান আহত হয়েছে। সাজানো সংসার ছিল এই দম্পতির। বোমার আঘাতে উড়ে গেছে বসতভিটা।
নিষ্পাপ সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি তারা। সিরিয়ার গৌটাতে সদ্যজাত দুই যমজ সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন এই দম্পতি।
কিন্তু বিধিবাম। সুখ বেশিদিন সইলো না কপালে।
মঙ্গলবার শহরে দফায় দফায় বিমান হামলা চালায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। হঠাৎ এক বোমা এসে পড়ে তাদের বাড়ির পাশে। মুহূর্তেই সব শেষ।
সিরিয়ার অবরুদ্ধ বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দউমা শহরকে টার্গেট করে টানা আট দিন ধরে বিমান হামলা চালাচ্ছে দেশটির সরকারি বাহিনী এএফপি
এভাবেই যুদ্ধের মূল্য শোধ করছে সিরিয়া: অপুষ্টিতে মরছে শিশুরা
এক মাসের শাহারের গায়ের চামড়া ভেদ করেই যেন বেরিয়ে আসছিল তার ছোট ছোট হাড়গুলো। গত রবিবার সিরিয়ার পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ঘাউটার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে শিশুটি। যে শহরটির ওপর অবরোধ চাপিয়ে দিয়েছে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন আসাদ সরকার।
আসাদ সরকারের স্বৈরশাসনের বিরোধী গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের ঘাঁটি হওয়ায় এই শাস্তির খড়গ নেমে আসে প্রদেশটির ওপর। যার ফলে খাবার না পেয়ে প্রদেশটির শতশত নিষ্পাপ শিশু মরছে অপুষ্টিতে।
২০১৩ সাল থেকেই প্রদেশটির ওপর অবরোধ আরোপ করে আসাদ সরকার। ফলে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পশ্চিমে অবস্থিত প্রদেশটিতে খুব কমই ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছে।
মাত্র ৩৪ দিন বয়সী শাহার দফদা নামের শিশুটিকে তার বাবা-মা পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ঘোউটার হামুরিয়া শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন শনিবার। সে সময় সেখানে এএএফপির একজন রিপোর্টার ছিলেন যিনি পুষ্টিহীনতার যন্ত্রণাক্লিষ্ট শিশুটির এই ছবিগুলো তোলেন।
হাড়জিরজিরে শিশুটি কাঁদার চেষ্টা করেও কাঁদতে পারছিল না। যেন একটি জীবন্ত কঙ্কাল। তার ওজন দুই কেজির চেয়েও কম ছিল। তার মতো ঘোউটার আরো কয়েক শ শিশু তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
তারা মাও এতটাই পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল যে তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছিল না খাবারের অভাবে দেহে দুধ উৎপাদিত না হওয়ায়। তার বাবাও একটি কসাইর দোকানে কাজ করে খবু সামান্যই উপর্জন করেন। যা দিয়ে নিজেদের খাবারই যোগাড় করা সম্ভব হয়না সেখানে বাচ্চার জন্য দুধ কেনা তো দূরের কথা।
শিশুটি হাসপাতালে মারা যায়। একইদিনে আরেকটি শিশুও পুষ্টিহীনতায় মারা যায়।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, এমন আরো কয়েক শ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এছাড়া, পুর্ব ঘোউটার সব মানুষই তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন। আর বাজারে দ্রব্যমূল্যের দামও আকাশছোঁয়া।
তুরস্কের এনজিও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এর ডাক্তার এবং মেডিকেল সেবার আঞ্চলিক প্রধান ইয়াহইয়া আবু ইয়াহইয়া বলেন, তাদের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে এমন অপুষ্টির শিকার প্রায় ১০ হাজার শিশুকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে।
এর মধ্যে ৮০ জন প্রায় মৃত্যুর পথে রয়েছে। ২০০ জন তীব্র অপুষ্টির শিকার। আর ৪০০ জন পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
জাতিসংঘের হিসেব মতে ওই অঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সেখানে ২৫ হাজার মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে।