নিজের মোটরসাইকেলের সঙ্গে একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কা লাগার ঘটনার জের ধরে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শ্যামলীতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন এক পুলিশ সদস্য।
আরিফুল ইসলাম নামের ওই ক্ষুব্ধ পুলিশ কনস্টেবল গাড়িটি থামিয়ে ব্যাপক ভাংচুর এবং গাড়ির তিন আরোহীকে মারধর করেন। তার এমন মারমুখী আচরণে বিস্মিত হন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তাদের কেউ কেউ তাকে থামানোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা তাকে আটক করে রাখে। পরে আদাবর থানার পুলিশ গিয়ে ওই কনস্টেবলকে উদ্ধার করে। তার আচরণ দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে এটিকে পুলিশের 'মাস্তানি' বলে তির্যক মন্তব্য করেন। ওই সময় মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে ঘটনার পুরো দৃশ্য ধরা পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশের চ্যান্সারি বিভাগে কর্মরত আরিফুল ইসলাম দুপুর ২টার দিকে শ্যামলী সিনেমা হলের সামনের রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা আলমের ছেলে রাগীব মোহাম্মদ ও তার তিন বন্ধু প্রাইভেটকারে বনানীর দিকে যাচ্ছিলেন।
এ সময় আরিফুলের মোটরসাইকেলের সঙ্গে গাড়িটির সামান্য ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে দু'পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ সদস্য রাগীব এবং তার দুই বন্ধু নাহিন ও মাহাদিকে মারধর করেন। পরে নিজের হেলমেট দিয়ে গাড়ির জানালা এবং সামনের ও পেছনের কাচ ভাংচুর করেন আরিফুল। এ সময় ঘটনাস্থলে আশপাশের লোকজনের ভিড় জমে যায়। তারা আরিফুলের কাছে মারধরের কারণ জানতে চান। এতে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে হম্বিতম্বি করতে থাকেন।
এতে লোকজনও উত্তেজিত হয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে আদাবর থানা পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আরিফুলের বাবা সাইফুল ইসলাম পুলিশের স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়ন-এসপিবিএনের এএসআই।
ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা রাগীবের বন্ধু অরিত্র বলেন, হঠাৎ করেই ওই পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেলটি গাড়ির সামনে চলে আসে। ফলে সামান্য ধাক্কা লাগে। তবে তার বা মোটরসাইকেলের কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু তিনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে সবাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করেন। অনেক অনুরোধ করা হলেও তিনি কোনো কথা শোনেননি।
শ্যামলী ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কনস্টেবল রেজাউল জানান, দুপুর ২টার দিকে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি দু'পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার দৃশ্য দেখতে পান। পরে থানা পুলিশ গিয়ে দু'পক্ষকেই নিয়ে যায়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গাড়ির ধাক্কায় গর্তে পড়ে গিয়ে আহত হন কনস্টেবল আরিফুল। পরে তিনি ওই গাড়ির কাচ ভেঙেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। এরপর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে আরিফুল কাউকে মারধর করেননি বলে দাবি করেন তিনি।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আদাবর থানায় দু'পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালায় পুলিশ। তবে ভুক্তভোগীরা তাতে রাজি হননি। তারা এ ব্যাপারে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে মামলা করার কথা জানান।
এ প্রসঙ্গে আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দু'পক্ষ থানায় এসেছিল। কিন্তু পরে দেখা যায়, ঘটনাস্থল মোহাম্মদপুর থানার মধ্যে পড়েছে। এ কারণে তাদের ওই থানায় পাঠানো হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর সমকালকে বলেন, আদাবর থানা পুলিশ ঘটনাটি দেখছিল। পরে মামলা করার জন্য ভুক্তভোগীরা মোহাম্মদপুর থানায় আসেন। তবে শেষ পর্যন্ত দু'পক্ষ সমঝোতা করে এবং মামলা করবে না বলে জানান।