সরকারি আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ প্রেসবিফিংয়ে বলেন, ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের যারা পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ও ব্যাখ্যা আসার পর সিদ্ধান্ত হবে কবে এবং কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রধান থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল। সসদস্যসচিব থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক।
সদস্য থাকবেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, রাকাব এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি।
আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
(১৪ জানুয়ারি,২০১৮) পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা, প্রশ্নফাঁসসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন পরীক্ষার্থীরা।
রবিবার সকাল ১০টায় ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে শতাধিক পরীক্ষার্থী মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে জড়ো হলে পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন। পরে সেখান থেকে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জড়ো হয়েছেন।
ফেসবুকে ‘আট ব্যাংকের পরীক্ষা বাতিল চাই' নামে গ্রুপ খুলে সংগঠিত হয়েছেন তারা। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনার ছবি দেখান। ফেসবুক ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া ছবি দেখিয়ে তারা পরীক্ষা নতুন করে নেয়ার দাবি জানান।
নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্র ও বসার জায়গা না পেয়ে শাহ আলী মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধও করেছেন। ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০ জানুয়ারি। ওই কেন্দ্রে ৫ হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থী পরীক্ষাই দিতে পারেননি। দনিয়া কলেজে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট পর প্রশ্ন এসেছে। পরীক্ষা শুরু হয়েছে আরো পরে।
পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাইরের ফটকে রোল নম্বর টাঙানো থাকলেও অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার হলে আসনবিন্যাস ঠিকমতো ছিল না। যে যার মতো বসেছেন। দুজনের ছোট বেঞ্চে বসতে হয়েছে চার থেকে ছয়জনকে। পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পরও অনেক কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র যায়নি। অনেক কেন্দ্রে ছাপা প্রশ্নপত্র এতটাই অস্পষ্ট ছিল যে তা পড়তে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
তারা আরো বলেন, পরীক্ষার কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রেই পরীক্ষার্থীরা তা নিয়ে ঢুকেছেন। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকে ফেসবুকে চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে পরীক্ষার অব্যবস্থাপনা নিয়ে ছবি আর ভিডিও আসা শুরু করে।
প্রশ্নপত্র ও বসার জায়গা না পেয়ে শাহ আলী মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধও করেছেন।
গত বছর সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষাসহ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা না করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার চেম্বার বিচারপতি সে আদেশ স্থগিত করেন। এই আদেশের ফলে ওই তিন ব্যাংকসহ আট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার (সাধারণ) ১ হাজার ৬৬৩টি শূন্য পদে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫২৫ জন পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন।