উচ্চস্বরে গান বাজানোর প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ওয়ারীতে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার নাম নাজিমুল হক (৬৫)। তিনি অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গোপিবাগ প্রথম লেনের বিপরীতে অবস্থিত লা ক্রিসেন্দ্রা অ্যাপার্টমেন্টে এ ঘটনা ঘটে। একই অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা ও সেক্রেটারি আলতাফ হোসেন এবং তার পরিবারের লোকজন বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

নিহতের ছেলে নাসিমুল হকের বন্ধু আরিফ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ১২টার পরে ৯ তলা ভবনের ওই অ্যাপার্টমেন্টের সেক্রেটারী এফ-৫ ফ্লাটের বাসিন্দা আলতাফ হোসেনের এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। এ সময় সেখানে উচ্চস্বরে গান-বাজনা হচ্ছিলো।

এতে ঘুমাতে পারছিলেন না একই অ্যাপার্টমেন্টের ৯ম তলার সি-৮ নং ফ্লাটের বাসিন্দা অসুস্থ্য নাজিমুল হক (৬৫)। ইতিপূর্বে হার্টের সমস্যার কারণে তার বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনী রোগে ভুগছিলেন।

পরে ঘুমাতে না পেরে নাজিমুল হক নিচে গিয়ে কেয়ারটেকারকে বিষয়টি জানান। পরে অ্যাপার্টমেন্টের সেক্রেটারিকে আলতাফ হোসেনকে বিষয়টি জানালে তিনি নিচেই আসেন। এ সময় উচ্চস্বরে গান বাজানোর প্রতিবাদ জানান তিনি।

এতে উভয়ে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে বিষয়টি সেখানেই মিটে যায়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আলতাফ হোসেন তার স্ত্রীসহ পরিবারের ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী সদস্য নিয়ে নিচে নেমে অ্যাপার্টমেন্টের কেয়ারটেকারকে দিয়ে নাজিমুল হকের পরিবারের সদস্যদের ডাকেন।

এর প্রেক্ষিতে নাজিমুল হক, তার ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা নাসিমুল হক, কলেজ শিক্ষক মেয়ে নিশি, নাসিমুল হকের স্ত্রী মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষক নিচে নেমে আসেন। নামার সঙ্গে সঙ্গে রাতের ঘটনা নিয়ে তারা আবারো বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে নাসিমুল হককে আলতাফ হোসেনের লোকজন মারধর শুরু করে। এ সময় তার পিতা নাজিমুল হক এগিয়ে এসে ছেলেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। পরে আলতাফ ও তার পরিবারের পুরুষ-নারী সদস্যরা নাজিমুল হককে মারপিট করতে থাকেন।

এ সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে তারা হামলাকারীরা তাদের ওপরও চড়াও হয়। নাসিমুলের বন্ধু আরিফ জানান, তাদের পুরুষ সদস্যরা নারীদের ওপরও হামলা চালায়। এদিকে তাদের হামলায় অসুস্থ্য নাজিমুল হক নিস্তজ হয়ে পড়েন।

এ সময় তার ছেলে ও পরিবারের সদস্যরা নিজেদের গাড়িতে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য মিটফোর্ডের সলিমুল্লাহ মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে ওয়ারী থানার এসআই হারুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ওই অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিলো। এ সময় উচ্চস্বরে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আলতাফ হোসেন নিহতের পরিবারকে ডেকে আনে। এরপর উভয় পরিবারের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এক পর্যায়ে নাজিমুল হক অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এতে তার মৃত্যু হয়। তিনি আরো বলেন, নাজিমুল হক আগে থেকেই অসুস্থ্য ছিলেন। তাই হাতাহতির কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। তবে তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন এসআই হারুন।

 


Comments