খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, কারাবিধি অনুসারে তাকে ডিভিশন বা রাজবন্দীর মর্যাদা দেয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, কারাবিধি অনুসারে তাকে ডিভিশন-প্রাপ্ত বন্দীর মর্যাদা দেয়া হচ্ছে না।

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ গতকাল বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাথে দেখা করার পর বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, "২০০৬ সালের সংশোধিত জেল কোডে নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে কারা কারা অটোমেটিক্যালি ডিভিশন পাবে। অথচ উনাকে কোনো ডিভিশন দেয়া হয়নি। উনি সাধারণ কয়েদি হিসেবে আছেন।"

নি আরো বলেন, ডিভিশন পাওয়ার জন্য কোনো আদালতের অর্ডার লাগে না। কারণ আইনের মধ্যেই আছে ।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীদের আবেদনের পর ঢাকার একটি আদালত ডিভিশন-প্রাপ্ত বন্দী হিসেবে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।

কিন্তু কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া এখনো সাধারণ বন্দী হিসেবে আছেন। আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে তার কপি হাতে পাওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও তিনি জানান।

কিন্তু কারাগারে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বা ডিভিশন বিষয়ে জেলকোডে আসলে কী বলা আছে?

জেল কোড অনুসারে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারাগারে ডিভিশন প্রদান করা হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশেও কাউকে কাউকে ডিভিশন দেয়া হয়। বিবিসি বাংলাকে এমনটাই বলছিলেন, সাবেক উপ-কারা মহাপরিদর্শক মোঃ শামসুল হায়দার সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, তিন শ্রেণীর ডিভিশন দেয়া হয়ে থাকে। ডিভিশন- ১, ডিভিশন- ২ এবং ডিভিশন- ৩।

এ ধরনের ডিভিশনপ্রাপ্তরা কী ধরনের সুবিধা পাবেন জানতে চাইলে সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স হায়দার বলেন, " বিধি অনুসারে প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন-প্রাপ্তদের প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা রুম থাকে। খাট, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনী, আয়না সবকিছুই থাকে।

আর তার কাজকর্ম করে দেয়ার জন্য আরেকজন বন্দীও দেয়া হয়। ছেলে বন্দীর ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে ছেলে আর মেয়ে বন্দীর জন্য একজন মেয়ে থাকবেন।"

তাছাড়া তিনি বইপত্র পাবেন এবং তিনটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। সাধারণ বন্দীদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর খাওয়ার মানও ভালো থাকে, জানান তিনি।

এ ধরনের সুবিধা কাদের ক্ষেত্রে দেয়া হয়?

সাধারণত সামাজিক মান- মর্যাদা অবস্থান বিবেচনায় ডিভিশন প্রদান করা হয় বলে জানান সাবেক উপ-কারা মহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার।

তিনি বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স যেটি আছে, কনভিক্টেড বন্দীদের ক্ষেত্রে (সাজাপ্রাপ্ত বন্দী) আদালত ডিভিশন প্রদান করেন। কোনো কারণে আদালত সেটি না দিয়ে থাকলে, তখন তারা আবেদন করতে পারেন। কারা কর্তৃপক্ষ সে আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসবে তিনি ডিভিশন পাবেন কি-না?

এক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কি ধরনের ডিভিশন পাওয়ার কথা?

সে প্রশ্নে হায়দার বলেন, পর্যায়ক্রমে তার অবস্থান বলতে গেলে তিনি সাবেক সেনাপ্রধানের ওয়াইফ ছিলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ছিলেন, নিজে তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং একটি দলের সভানেত্রী বা প্রধান। সার্বিক বিবেচনায় উনার ডিভিশন পাওয়ার কথা এটা আইনের মধ্যেই আছে। কোর্ট থেকে উনাদের অনুমোদন না দেয়ার কারণে উনারা আবেদন করলে সেসব সুবিধা পাবেন বলেই ধারণা করি।

খাবার -দাবারের মান ভালো থাকে বলছিলেন সাবেক উপ-কারা মহাপরিদর্শক হায়দার। সেটি কী রকম?

"প্রত্যেক বন্দীর জন্য একটি বরাদ্দ থাকে। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য টাকার পরিমাণটি বেশি থাকে। যার কারণে চিকন চালের ভাত পান। সকালে রুটি, ডিম, কলা, ভাজি, বাটার, জ্যাম-জেলি চাইলে সেগুলোও দেয়া হয়। দুপুরে ভাত-মাছ/মাংস তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু সাধারণ বন্দীদের ক্ষেত্রে এসব সুযোগ থাকেনা" হায়দার জানান।"

এর বাইরে আর কী ধরনের সুবিধা থাকে- জানতে চাইলে হায়দার বলেন, ডিভিশনটাই বিশেষ সুযোগ-সুবিধা যা সাধারণ বন্দীরা পান না। সাধারণ বন্দীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটিতে ঘুমায়।

কিন্তু ডিভিশন-প্রাপ্ত বন্দীর জন্য খাট থাকে। তাদের সবকিছু সাধারণ বন্দীর চেয়ে আলাদা এবং ডিভিশন-প্রাপ্ত সকল বন্দী-ই এ ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

 


Comments