ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত অংশীদার হয়েছে চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম। ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জসহ ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক-এর কনসোর্টিয়াম অংশীদার হতে প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে চীনা প্রতিষ্ঠান দুটির প্রস্তাবেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ।
সোমবার ডিএসইর পর্ষদ সভায় এ অনুমোদন আসে বলে সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের জন্য ডিএসইর প্রস্তাব ‘শিগগিরই’ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
চীনের প্রধান তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সাংহাই ও শেনচেন রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাতেও রয়েছে তারা।
সাংহাই স্টক একচেঞ্জের বাজার মূলধন সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেনচেন স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
কৌশলগত অংশীদার পেতে তিন মাস আগে ডিএসই আহ্বানে দুটি কনসোর্টিয়াম দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে ছিল চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক-এর কনসোর্টিয়াম।
দুটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের কনসোর্টিয়ামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।
এদিকে ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের পর গত সপ্তাহে বাজারে নানা ধরনের খবর ছড়িয়ে পড়ে; যার প্রভাবে সূচক নীচেই নামতে থাকে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, কৌশলগত অংশীদার করতে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের দেওয়া প্রস্তাব ডিএসই গ্রহণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পুনরায় যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি।
এ খবর আসার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এসইসির এ পদক্ষেপের বিষয়ে ‘ডিএসইর কৌশলগত মালিকানার অংশীদার বাছাইয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপে টিআইবির উদ্বেগ: জড়িতদের জবাবদিহি ও সংশ্লিষ্ট দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্তির আহ্বান’শীর্ষক এক বিৃবতি দেয়।
টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন যোগানো তেমনই বে আইনি ও অগ্রহণযোগ্য।”
এ প্রসঙ্গে বিএসইসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই না করে এ ধরনের চূড়ান্ত মন্তব্য টিআইবির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
প্রস্তাব অনুযায়, চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৯০ কোটি টাকায় ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার (প্রতিটি ২২ টাকা দরে) কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সেসঙ্গে ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তারা।
অন্যদিকে, এনএসইর নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা করে ২৫ দশমিক এক শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি তারা কারিগরি সহযোগিতার কথা বললেও কত টাকা ব্যয় করবে তার উল্লেখ করেনি।
ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য আশা করছেন, কৌশলগত অংশীদার পেলে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির তালিকাভূক্তি বাড়বে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে।