সারা দেশে ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চাচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। এ ক্ষেত্রে যাতে কোনো রকম অনিয়ম-দুর্নীতি না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে প্রত্যেক জেলায় এসপি ও অতিরিক্ত এসপি পদমর্যাদার দু’জন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
৭৩ সদস্যের এই টিমকে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক করেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। জেলায় গিয়ে পর্যবেক্ষকরা কীভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও তদবির সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবেন সে বিষয়ে সার্বিক দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন আইজিপি।
পর্যবেক্ষকদের বলা হয়েছে, নিয়োগ নিয়ে তারা যখনই কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির গন্ধ পাবেন তখনই যেন পুলিশ সদর দফতরকে জানানো হয়। পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আইজিপি জানান।
পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে। আইজিপিও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা মঙ্গলবার বিকালে তার অফিসকক্ষে সঙ্গে আলাপকালে এ নিয়ে তার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
এদিকে যে ৭৩ জন কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে পুলিশ সদর দফতর থেকে জেলায় পাঠানো হচ্ছে তাদের তালিকা যুগান্তরের কাছে এসেছে। এদের নাম প্রকাশ হলে তদবিরবাজরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করতে পারেন। এতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে- এই যুক্তিতে তালিকাটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র বলছে, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে দুইটি ধাপে দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এসপি অফিস থেকেই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। গত বছরের শেষের দিকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। এরপর থেকেই নিয়োগকে ঘিরে এক শ্রেণীর পুলিশ এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। সিন্ডিকেট সদস্যরা সারা দেশে তাদের এজেন্ট তৈরি করে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা শুরু করছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলায় এ রেট ১৬ লাখে গিয়ে ঠেকে। এজেন্টদের সুপারিশের ভিত্তিতে কতিপয় মন্ত্রী-এমপি ডিও লেটারও তৈরি করে ফেলেন। এসব কারণে তৎকালীন আইজিপি একেএম শহীদুল হক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন।
গত ৩১ জানুয়ারি জাবেদ পাটোয়ারী আইজিপি হিসেবে যোগদানের পর ঝুলে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়া ফের চালু করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো চাকরি প্রার্থীর বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পেলে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। পুলিশে চাকরির ক্ষেত্রে এ জাতীয় ঘোষণা এই প্রথম।
সূত্র মতে মঙ্গলবারের বৈঠকে আইজিপি জানিয়েছেন, যদি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন সেটা চাকরি প্রার্থী বা রাজনৈতিক নেতার ব্যাপার। কিন্তু কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি নিয়োগ দেয়ার বিনিময়ে অর্থ লেনদেন করেন তার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আইজিপির সরাসরি যোগাযোগ থাকবে। এছাড়া পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি এবং ডিআইজি পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, কনস্টেবল নিয়োগ যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকে সেজন্যে জেলা পর্যায় থেকে নিয়োগ না দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে (সার্জেন্ট বা এসআইদের যেভাবে নিয়োগ দেয়া হয়) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছিল।
কিন্তু ওই সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। তাই এবারও জেলা পর্যায় থেকে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। তবে নিয়োগ নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক পুলিশ সদর দফতর।