বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা’ শব্দটি এ দেশে এখন বহুল প্রচলিত একটি বুলিতে পরিণত হয়েছে।
কথায় কথায় অনেকেই তোতা পাখির মতো এই শব্দটি উচ্চারণ করছেন, ব্যবহার করছেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের বেশির ভাগই স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করেন না।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তিই ছিল স্বাধীনতার মূল চেতনা। ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে, ধনিক শ্রেণির বিরুদ্ধে, বৈষম্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে একটি সমঅধিকারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণের প্রত্যাশায় আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমরা বাস্তবে কী পেয়েছি?
মঙ্গলবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আলোচনায় অংশ নেন- প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছরের মাথায় এসে আমরা দেখছি, নব্য ধনিক শ্রেণির জন্ম হয়েছে। বৈষম্য বেড়েছে। ভারসাম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব সম্পদ মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে। সম্পদশালীরা ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রণ করছে।
একসময় সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধি হতে পারত। এখন কোটিপতি না হলে নির্বাচন করা যায় না। সত্তরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই নির্বাচনে আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কালীগঞ্জসহ কয়েকটি জায়গায় ঘুরেছি। ভোটে জনগণের সম্পৃক্ত দেখেছি। টাকা খরচ করতে হয়নি।
এখন ২ কোটি টাকার নিচে নির্বাচন হয় না। সাধারণ মানুষ ভোটে দাঁড়াতে সাহস করে না। যাদের হাতে টাকা আছে তারাই ভোট করে, নির্বাচিত হয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে। নীতির রাজনীতি এখন বিলুপ্তির পথে।’
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীনের মতো নেতাদের বাড়ি গাড়ি ছিল না। সম্পদ ছিল না। এখন ছাত্র নেতারাও কোটি টাকা দামের গাড়িতে চলেন। তাদের সম্পদের অভাব নেই। এখন দল ক্ষমতায় এলেই অনেকে নিজের আখের গোছান। সম্পদশালী হন।
এর নাম স্বাধীনতার চেতনা না। দেশের বেশির ভাগ শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষকে অস্বীকার করে স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে না।
সভাপতির বক্তব্যে দেশের বাম ঘরানা রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আসার আহ্বান জানিয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘নেপালে বামপন্থীরা এক প্ল্যাটফর্মে আসতে পারলে আমরা কেন পারব না? ভুলত্রুটি বিসর্জন দিয়ে এ দেশের বামদের উচিত এক প্ল্যাটফর্মে আসা।
তিনি বলেন, লুটেরা ধনিক শ্রেণি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্ব দখল করে নিয়েছে। এ অবস্থায় এদেশের বামদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।