টুশটাস হাতুড়ির শব্দ। কঠিন ইটের গায়ে আঘাত হেনে চলছে কোমল হাতে ধরে থাকা হাতুড়ি। ইট ভাঙার শব্দ। ইট ভাঙা হচ্ছে রাস্তার পাশে, বাড়ি আঙ্গিনায় বসে। কোথাও আবার ঘরের বারান্দা কিংবা রান্নাঘরের ভেতরেই চলছে ইট ভাঙার কাজ। বিভিন্ন বয়সী নারী এ কাজ করছে। কোনো স্থানে একা একা, কোনো স্থানে আবার দলবদ্ধভাবে।
এটি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরশহরের বালুয়াপাড়া গ্রামের প্রতিদিনের দৃশ্য। সংসারের সব কাজ করার পাশাপাশি ইট ভেঙে পরিবারের অভাব দূর করেছেন এই গ্রামের দেড় শতাধিক নারী। নিজেরা উপার্জনক্ষম হয়ে বদলে দিয়েছেন নিজেদের জীবন যাত্রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইট ভাঙার কাজ করা নারীদের অনেকেরই এখন আধা-পাকা বাড়ি রয়েছে। অনেকের ঘরে ঘরে আছে খাট, খাবার টেবিল ও রঙিন টেলিভিশনসহ নানা আসবাবপত্র। ইট ভাঙার কাজে নিয়োজিত আম্বিয়া খাতুন বলেন, এই কাজ শুরু করার পর অভাবের সংসারে উন্নতি হয়েছে। স্
বামী-সন্তানসহ সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে আমরা এখন সুখি। আমার কারখানায় ১৫/১৬ নারী ইট ভাঙার কাজ করে। নারীদের সাথে আমি নিজেও এখনো ইট ভাঙি। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসাও শুরু করেছি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালুয়াপাড়ার ২০টির বেশি পরিবার সরাসারি ইট কিনে সুড়কি করে ব্যবসার কাজে যুক্ত। ইট কিনে আনা ও সুড়কি করে বিক্রির জন্য অনেকেই কিনে নিয়েছেন ট্রলি। যে পরিবারগুলো এখনো নিজেরা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি তারা অন্যের অধীনে ইট ভাঙার কাজ করছে।
ইট ভাঙার কাজের জন্য তাদের ধরাবাঁধা কোন সময় মানতে হয় না। সংসারের অন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে দিনে-রাতে যখন ইচ্ছা তখন ইট ভাঙে। ইট ভেঙে এক টিন সুড়কি করলে পায় পাঁচ টাকা।
বালুয়াপাড়া গ্রামের নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরুষেরা ইজিবাইক চালনো, মুদি দোকান করাসহ নানা পেশায় আছেন। পুরুষদের রোজগারের পাশাপাশি নারীদের ইট ভাঙা কাজের রোজগার এখন জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করছে। ছেলে-মেয়েরা এখন স্কুলে যায়।
গ্রামের বাসিন্দা বিধবা হাজেরা বেগম (৪৫) বলেন, আমার পরিবারের লোকজন বাইরে থাকে। অবসরে আমি এখানে এসে ৮/১০ টিন ইট ভাঙি। এতে আমার ৫০ টাকার মতো আয় হয়।
তাজ্জতুনন্নেছা বলেন, ‘২০ বছর ইট ভাইঙা সংসারের খাওন যোগাইছি। এখনও সময় পেলে ভাঙি। ইট ভাঙনের কাজ আমাদের অভাব দূর করছে। যেই এলাকার মানুষ তিন বেলা খাইতে পারতো না, হেরা অহন অনেক সুখে দিন কাডায়’।