কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদসহ মোট ৫টি পদে শুক্রবার ছিল নিয়োগ পরীক্ষা। এই নিয়োগ পরীক্ষায় অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে দুই বুয়েট ও এক ঢাবি ছাত্রসহ মোট ছয়জনের ঠাঁই হয়েছে কারাগারে।
পরীক্ষার হল থেকে তাদের আটক করে প্রত্যেককে দেড় মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুরে কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেটের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদ ছয় প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে এই কারাদন্ডাদেশ দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
দন্ডিত প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা হচ্ছেন, দুই বুয়েট ছাত্র ফারদিন হাসান (২৫) ও ফয়সল সরকার (২৪), ঢাবি ছাত্র মো. আনোয়ার হোসেন (২৬), গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র শফিকুল ইসলাম সুমন (২৪), মো. শরীফুল ইসলাম (২৪) ও মো. আব্দুল কাদির (২৬)।
তাদের মধ্যে বুয়েট ছাত্র ফারদিন হাসান বরগুনা সদরের কলেজ ব্রাঞ্চ রোডের আব্দুল মোতালেবের ছেলে, বুয়েট তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সল সরকার রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার এস.আর পাড়ার সরকার ভিলার একরামুল হক সরকারের ছেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র মো. আনোয়ার হোসেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ মাঘান গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে, সরকারি গুরুদয়াল কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম সুমন মিঠামইনের চানপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে, মো. শরীফুল ইসলাম নিকলীর দৌলতপুর গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে এবং মো. আব্দুল কাদির হোসেনপুরের দক্ষিণ পানান গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদসহ ৫টি পদে ৬৬টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১২টি কেন্দ্রে মোট ৬ হাজার ৪৯৭ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন।
এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের সীল এবং নিজের ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র তৈরি করে ফারদিন হাসান, ফয়সল সরকার, মো. আনোয়ার হোসেন, শফিকুল ইসলাম সুমন, মো. শরীফুল ইসলাম ও মো. আব্দুল কাদির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পরীক্ষা চলাকালে পরিদর্শকরা মূল আবেদনপত্রের ছবির সঙ্গে প্রবেশপত্রের ছবির অমিল দেখতে পেয়ে তাদেরকে প্রক্সি পরীক্ষার্থী হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
পরে সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতে প্রত্যেককে দেড় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠান।
দ-িতদের স্বাক্ষরিত স্বীকারোক্তিমূলক বিবরণে দেখা গেছে, জেলা শহরের পৌর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হাসান জনৈক নূরুল হকের ছেলে আমিনুল হকের পক্ষে (রোল ৩৩৫৪) তিন হাজার টাকার বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। আরজত আতরজান স্কুল কেন্দ্রে বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সল সরকার কটিয়াদীর চান্দপুর শেখের পাড়ার মোহনলাল ঘোষের ছেলে প্রদীপ কুমার ঘোষের (রোল ৬৭৩৫) পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
সরকারি এসভি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র মো. আনোয়ার হোসেন জনৈক আবুল আলমের ছেলে মো. আসাদ উল্লার (রোল ৬৫৬৩) পক্ষে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
শহরের সরকারি বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্থানীয় সরকারি গুরুদয়াল কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম সুমন মিঠামইনের কোলাহানী গ্রামের মো. শাহজাহানের ছেলে মো. সেলিমের পক্ষে (রোল ৪৭৪৫) প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এছাড়া পৌর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে মো. শরীফুল ইসলাম জনৈক রহিম উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের (রোল ২৯১৪) পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
সরকারি এসভি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে মো. আব্দুল কাদির (২৬) হোসেনপুরের দক্ষিণ পানান গ্রামের মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের ছেলে মো. আরিফের পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীল জানিয়েছেন, যেসব মূল পরীক্ষার্থী এসব প্রক্সি পরীক্ষার্থী নিয়োজিত করেছিলেন, তাদের নাম-ঠিকানা প্রশাসনের নথিতে রয়েছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে।