২০১৪ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছিল শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক। কিন্তু এতে ব্যবহার করা হয়েছিল নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী।

 
ফলে বছর না ঘুরতেই ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কের পুরোটাজুড়ে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়।

এতে সড়কটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০১৬ সালে ফের তিন কোটি টাকার তড়িঘড়ি সংস্কারকাজ করা হয়। কিন্তু সড়কটি আর চলাচল উপযোগী হয়নি।

এর পর পেরিয়ে গেছে দুই বছর। সড়কটির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং সড়কজুড়ে গর্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।

জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া বন্দর থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলুরবাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক।

এই রুটে প্রতিদিন খুলনা, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোহর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় সব ধরনের শত শত ভারী যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের ব্যবহারে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়লে শরীয়তপুরবাসীর দাবির মুখে ২০১৪ সালে মহাসড়কটি সংস্কার করা হয়।

কিন্তু নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় বছর না ঘুরতেই ফের যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে মহাসড়কটি।

এর পর ২০১৬ সালে ভেঙে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে নামকাওয়াস্তে সংস্কার করা হলেও সড়কটি তেমন একটা চলাচলের উপযোগী হয়নি। এর মধ্যে গত দুই বছরে অবস্থার আরও অবনতি হয়ে সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণপুরে মহাসড়কের গর্তে চাকা পড়ে একটি ট্রাক পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন শ্রমিক মারা যান। এ ছাড়া আহত হন চারজন।

নিহতরা হলেন জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের মদন গোপাল গ্রামের আবদুল হালিম (২২), একই উপজেলার চরচান্দিনা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২২) এবং শেরপুরের চরকাহিমারা গ্রামের শাহ জামাল (৩০)। আহতরা হলেন সাইদুল ইসলাম (২৬), বাহার (২৫), হায়দার(৩০)।

জানা গেছে, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার কারণে এ সড়কে যানবাহন চলাচলও কমে গেছে। মালবাহী যানবাহন এ সড়ক দিয়ে যেতে চাচ্ছে না।

চালকরা ঢাকা ঘুরে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত করছে। এতে করে গাড়িতে জ্বালানি বেশি খরচ হচ্ছে।

সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রাকচালক আলী হায়দার বলেন, গত এক বছর ধরে সড়কটি এতই খারাপ যে গাড়ি চালানো খুবই কষ্ট কর। একটু জোরে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। তা হলে উল্টে পড়ে যায়। অনেক কষ্টে যাতায়াত করি।

খুলনা থেকে চট্টগ্রামগামী কাঁচামাল বোঝাই ট্রাকচালক বলেন, এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি মালামালও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে বসে থাকার কারণে মাল পচে যাচ্ছে।

শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কে যাতায়াতকারী দূরপাল্লার বাসযাত্রীদের ভীষণ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

এ বিষয়ে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা শতাব্দী পরিবহনের বাসযাত্রী সুমাইয়া বলেন, এ রাস্তাটি এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে জীবনবাজি রেখে চলতে হচ্ছে। আতঙ্কে আছি কখন যেন গাড়ি উল্টে পড়ে। রাস্তাটি জরুরি ঠিক করা দরকার।

বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা বাসচালক সহিদুল ইসলাম খান বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তায় চলাচল করি। এখানে অনেক সময় নষ্ট হয়। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এ কারণে আতঙ্কে থাকি।

আলুর বাজার ফেরিঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার মো. আবদুস সাত্তার বলেন, রাস্তাটি এতই খারাপ অনেক যানবাহনই এখন আর রাস্তায় আসে না। এ কারণে এ রুটের ফেরিতে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

জানা গেছে, ভাঙাচোরা মহাসড়কের কারণে এ এলাকার ব্যবসাবাণিজ্যেও মন্দা তৈরি হয়েছে। নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে।

আংগারিয়া বাজারের ব্যবসায়ী স্বপন সাহা বলেন, এক বছর ধরে এ সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এ কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। মালামাল পরিবহন করা কষ্টকর। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি মেরামত করা প্রয়োজন।

স্থানীয়রা জানান, ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কের পুরোটাই বেহাল দশা। সব জায়গায় ধুলা উড়ছে। আশপাশের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধুলায় ঢাকা পড়ছে।

এ ছাড়া সড়কের বড় বড় গর্তে সামান্য বৃষ্টি হলেও পানি জমে যাচ্ছে। আর যানবাহন চলাচলের সময় ময়লা ও কাদায় আশপাশের বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ছিটকে পড়ছে।

শরীয়তপুরবাসীর অভিযোগ, এ জেলায় জণপ্রতিনিধিরা এলাকার উন্নয়নে মনোযোগ না দিয়ে আভ্যন্তরীন দ্বন্দে লিপ্ত থাকায়  বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এলাকাবাসী।  এ কারণে জেলার একমাত্র মহাসড়কটি বছরের পর বছর বেহাল দশায় পড়ে থাকলেও একে পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

এদিকে মহাসড়কটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলে স্বীকার করেছেন শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, মহাসড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। নিত্যনতুন দুর্ঘটনা ঘটছে।

জাকির হোসেন জানান, আপাতত মহাসড়কটি মোরামতের জন্য দুই কিস্তিতে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু করতে পারব। এ টাকায় ২৭ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করা যাবে।

এ ছাড়া সড়কটি পুনর্নির্মাণের জন্য একটি পিপি জমা দেয়া হয়েছে। এই পিপি অনুমোদন হলে সড়কটি পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলেও উল্লেখ করেন শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।

 


Comments