১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দুই যুগ আগে অনুমোদন-অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলেনি।
এদের বিরুদ্ধে এবার চূড়ান্তভাবে ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত অডিট হয় না, তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতামত চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এ মতামত পাওয়ার পর পরই ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে সব ধরনের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হবে।
প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হবে বলে জানা গেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে তাগাদাপত্র দেয়ার পরও কোনো অগ্রগতি না থাকায় এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ভর্তি বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। গত ৪ এপ্রিল ইউজিসির চেয়ারম্যানকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
গত ২৫ ফ্রেবুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার অগ্রগতি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর পরই ওই তাগাদাপত্র দেয়া হয়।
বৈঠকে ইউজিসির প্রণীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ ও আংশিক শিক্ষাকার্যক্রম নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাসে চালু করেছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ১৯টি। ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দুই যুগ আগে অনুমোদন-অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলেনি। গত ১৬ আগস্ট ওই ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিকে পৃথক চিঠি দিয়ে ৩১ ডিসেম্বর ’১৭-এর মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনুমোদিত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
গত ৭ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী-সচিব এবং মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পূর্ণাঙ্গ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হালহকিকত নিয়ে গঠিত যৌথ কমিটি গত ৩০ জুন ’১৭ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই গত ১৬ আগস্ট ’১৭, ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চিঠি দেয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ওই ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটিই প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না। জমি ক্রয় করলেও এখন পর্যন্ত তারা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য কোনো পদক্ষেপ শুরুই করেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে গত ১৬ আগস্ট ’১৭ চিঠি দিয়ে সর্বশেষ আলটিমেটাম দিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে অবশ্য ৮৪টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বরের’১৭ মধ্যে ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সব শিক্ষাকার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে ব্যর্থ হলে, ১ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার আলটিমেটাম শেষ হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ও স্থানান্তরে ছয় দফায় আলটিমেটাম দিলেও ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়নি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিযা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনির্ভাসিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনির্ভাসিটি এবং প্রাইম ইউনিভার্সিটি।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার বিধান রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য এক একর অখণ্ড জমি থাকতে হবে এবং সেখানেই সব শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে। এ দু’টি মেগাসিটির বাইরে যেকোনো জেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা ও পাঠদান করতে হবে দুই একর নিজস্ব অখণ্ড জমির ওপর।
কিন্তু অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো আইনের এ শর্ত শতভাগ পূরণ করছেন না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সাল থেকে অন্তত ছয়বার এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে আলটিমেটাম দিয়েছে। সর্বশেষ দেয়া আলটিমেটামও গত বছরের জানুয়ারিতে শেষ হয়। এরপর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে গত মার্চ মাসের ৭ তারিখে ইউজিসিতে যৌথ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর আরো ৯ মাস অতিক্রান্ত হলো।