প্রধান শিক্ষকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে নাটোরের রূয়েরভাগ শংকর গোবিন্দ চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণে নিরাপত্তাহীনতায় বাচ্চাদের অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অভিভাবকরা।
ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসন যৌন হয়রানির সত্যতা পেয়েছে। কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন।
ওই ছাত্রী বলেছে, গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি ৫ম শ্রেণিতে একটি অঙ্কের উত্তরে ভুল করলে প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র সরকার তাকে মারতে চায়। তখন সে শিক্ষককে মারতে বলে পিঠ এগিয়ে দিলে শিক্ষক তাকে মারার বদলে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। পরে সে শিক্ষকদের জানালে শিক্ষকরা তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে বলেন অভিভাবককে জানাতে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে বিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে যে সে আর বিদ্যালয়ে যাবে না।
কারণ জানতে চাইলে বলে প্রধান শিক্ষক নারায়ণ স্যার তার গায়ে হাত দিয়েছে। পরে এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। আর অন্য শিক্ষকরা বলেন- এই শিক্ষক আগেও অনেকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে। সতর্ক করে কোনো লাভ হয় না।
পরে মেয়েকে নিয়ে ৪ঠা মার্চ তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যে শিক্ষক তার নাবালক মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে তার কঠোর বিচার হোক। এমন মানুষের শিক্ষকতা করার কোনো যোগ্যতা নাই বলেও তিনি দাবি করেন।
একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনজের আলী বলেন, এর আগেও এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। পরে তিনি প্রধান শিক্ষককে নিষেধ করেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ না করতে। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি।
এমনকি বিদ্যালয়ের অন্যান্য মহিলা শিক্ষকরা অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একা একা থাকতে ভয় পান। যতক্ষণ প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে একা একা থাকেন সহকারীরা বাইরে দাঁড়িয়ে পায়চারি করে সময় পার করেন।
শাহিনুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, এমন ঘটনার পরও প্রধান শিক্ষক বহাল তবিয়তে বিদ্যালয়ে আছেন। সেকারণে তিনি তার মেয়েকে অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে পড়াতে চান। তার মতো আরো অভিভাবক আমিরুল ইসলাম, ওয়াসিম আলী, মিলন হোসেন এবং সাকলাইম হোসেনও একই কথা বলেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র কর্মকার বলেন, তিনি শিক্ষার্থীকে হাত দিয়ে মেরেছেন। তবে যৌন হয়রানির মতো কিছু তিনি করেননি। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
তদন্ত কর্মকর্তা নাটোর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু বলেন, তদন্তে তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। সেই মোতাবেক জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন ২৭শে মার্চে।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মেয়েদের রাস্তাঘাটে কেউ ঝামেলা করলে ছাড় দেয়া হয় না। আর বিদ্যালয়ের ভেতরে একজন শিক্ষক যদি ছাত্রীর সঙ্গে এমন করে তাহলে কীভাবে তাকে ছাড় দেয়া যায়? অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।