বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রথম একটি পরিবার মিয়ানমারে ফিরে গেছে। মিয়ানমার সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৭ লাখ উদ্বাস্তুর মধ্যে প্রথম রোহিঙ্গা পরিবারটিকে শনিবার তারা গ্রহণ করেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া একটি রোহিঙ্গা পরিবারের ৫ সদস্য স্বদেশে ফেরত গেছেন। শনিবার তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্ট দিয়ে স্বেচ্ছায় তারা মিয়ানমারে যান।

এদের মধ্যে তিন নারী, একজন পুরুষ ও একটি শিশু রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে পা রাখার পর দেশটির কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যান।তবে নো-ম্যান্স ল্যান্ড থেকে ফিরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার বাংলাদেশ সরকার কিংবা বিজিবিকে কিছুই জানায়নি।

 


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আখতার কামাল নামে এক রোহিঙ্গা নেতা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গোপনে দেশটিতে গেছেন। তিনি মংডু জেলার বলিবাজার এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন বলে জানা গেছে।

 

জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা নেতা আরিফ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গোপনে আখতার চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নিয়ে গেছেন। তবে তার দুই ছেলে এখনো নো-ম্যান্স ল্যান্ডে রয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

 

উল্লেখ্য, গতবছরের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে নির্যাতন শুরু করলে ৭ লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

 

জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সেনাদের এই অভিযানে ‘জাতিগত নিধন’ এবং ‘গণহত্যার’ অভিযোগ আনেন। তবে বরাবর মিয়ানমার তা অস্বীকার করে বলেছে, আইনগতভাবে ‘সন্ত্রাসী’ দমনে তারা অভিযান চালিয়েছে।

 

ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। সে অনুযায়ী রাখাইনে অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলা হয়েছে।

 

তবে জাতিসংঘ সর্বশেষ জানিয়েছে, এখনো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার মত পরিবেশ তৈরি হয়নি। এরই মধ্যে শনিবার গোপনে একটি রোহিঙ্গা পরিবারের ৫ সদস্যকে মিয়ানমার নিয়ে গেছে।

 

কাশ্মীরের ধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে সরব হতে এত দেরী কেন?

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮ বছরের শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় পুরো রাজ্য ক্ষোভে ফেটে পড়লেও সেই বিক্ষোভের উত্তাপ পৌঁছায়নি দিল্লিতে।

২০১২ সালের দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনায় পুরো রাজ্য যেভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো। আসিফা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কেউ এতোটা সরব হয়নি।কাশ্মীর উপত্যকার গণমাধ্যমগুলো এই ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে প্রচার করলেও বেশিরভাগ জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় পায়নি কোন কভারেজ।

কাশ্মীরের স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ তারা জানুয়ারি মাসেই এই খবরটি প্রচারে দিল্লি অফিসে যোগাযোগ করেছিলো। তাদের কাছে এই রোমহর্ষক ঘটনার চাইতে কাশ্মীর উপত্যকায় টিউলিপ বাগান উদ্বোধনের খবরটিকে বেশি জরুরি মনে হয়েছে।

পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় নিউজ নেটওয়ার্কগুলো হঠাৎ করেই সংবাদটি প্রচারে উঠেপড়ে লাগে।

প্রশ্ন ওঠে, ঘটনার ৪ মাস পর হঠাৎ কেন নড়েচড়ে বসলো দিল্লি মিডিয়া? হিন্দু ডানপন্থী দলগুলো তাদের কমিউনিটির এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানানোই কি তাদের নজর আকর্ষণের কারণ?

এ বিষয়ে ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সম্পাদক শেখর গুপ্ত জানান, এ ধরণের আচরণ দিল্লির সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকৃত চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। যেখানে তারা জাতীয় সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্ত এবং প্রভাবিত। বিশেষত সেনা নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের খবর প্রচারে তারা বরাবরই পক্ষপাতদুষ্ট।

এর পেছনে জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। বিশেষ করে হিন্দু ডানপন্থী সংগঠনগুলো এমনকি ক্ষমতাসীন বিজেপির দুজন মন্ত্রী গ্রেফতারকৃতদের প্রতি সমর্থন জানানোর পর এটি আলোচনায় উঠে আসে।

এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন কম ওঠেনি।

তিনি তার টুইট বার্তায় সুবিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চুপ করে যান।এ বিষয়ে সমাজ বিশ্লেষক ডক্টর বিশ্বনাথান বলেন, দিল্লির সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত হত্যা , ধর্ষণ, সহিংসতা, নির্যাতন, লুটপাটের খবর প্রচার করতে করতে গা সওয়া হয়ে গেছে।

প্রতিটি খবরেই তারা অতিরঞ্জন কিছু খুঁজতে চায়। যা তাদের নৈতিক বোধকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন, মিডিয়া আর রাজনীতিবিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ধর্ম, গোত্র ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ায় এখন আর মানবাধিকার বলে কিছু নেই। তার মতে, এখনকার মানুষের বিবেক অনেকটা রিপ ভ্যান উইঙ্কলের ঘুমের মতো।

সূত্রঃ বিবিসি

 


Comments