দেশের মানুষের প্রকৃত গড় আয় কমেছে এবং শিক্ষিত বেকারত্ব বাড়ছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় বাজেট ২০১৮-১৯ উপলক্ষে সিপিডির সুপারিশমালা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়।দেশে শোভন কর্মসংস্থান হচ্ছে না উল্লেখ করে সিপিডি’র বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে আয়হীন কর্মসংস্থান হচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) উচ্চতর প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ হলেও কর্মসংস্থান আরো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আগে ছিল কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি, এখন হয়ে গেছে আয়হীন কর্মসংস্থান।
তিনি বলেন, সরকারের হিসাবে কর্মসংস্থান বেড়েছে। এর বিপরীতে আমরা দেখছি দেশের মানুষের প্রকৃত গড় আয় কমেছে। এর মধ্যে নারী এবং গ্রামের মানুষের আয় বেশি কমেছে। যে কর্মসংস্থান হচ্ছে-তার অধিকাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। যেখানে শ্রমের অধিকার নেই এবং মজুরি কম। অন্যদিকে শিক্ষিত বেকারত্ব বাড়ছে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো আরো বলেন, প্রবৃদ্ধির হার, আয়ের হার, কর্মসংস্থানের হার এবং উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লেও এগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। যদি সামঞ্জস্য না থাকে, তাহলে চিন্তার বিষয়। প্রবৃদ্ধির হার ৭ কিংবা ৮ বিষয় নয়, কর্মসংস্থান এবং মানুষের আয় বাড়লো কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে।
ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটকে রোগের উপসর্গ অভিহিত করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘মূল রোগটা হলো- ব্যাংকিং খাতে বিকলাঙ্গ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকিং খাত নিতান্তই এখন এতিমে পরিণত হয়েছে। এই খাতের রক্ষকরা (ব্যাংক মালিক) ভক্ষক হয়ে এতিম শিশুকে নির্যাতন করছে।’
তিনি বলেন, নির্বাচনী বছরে রেমিটেন্স প্রবাহ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি অর্থ পাচারেরও ঝুঁকি থাকে। ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও আমদানি এই তিন মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনায় সিপিডি বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং নন-এনবিআর মিলে এ বছর ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচনী বছরে সরকারকে দেশে সংযত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, নির্বাচনী বছরে প্রত্যাশা বেশি থাকে। এর মধ্যেও আপনারা বাস্তববাদী হোন। ঋণের প্রবাহ, সুদের হার, মুদ্রা বিনিময় হার এবং সরকারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযত থাকুন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ডামাডোলে গরীব মানুষ যেন মারা না যায়। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত দেড় শতাংশ বরাদ্দ রাখা উচিত।
সিপিডি আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করে।
প্রতিবছরের এই সময়ে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনা (আইআরবিডি)’ এবং বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে থাকে সিপিডি। এবারের আইআরবিডি দলের সমন্বয়ক হচ্ছেন সিপিডির গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। পর্যালোচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক দিকটি তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য রাখেন।