এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা। সারা দেশে প্রায় ২৯ লাখ ভর্তিযোগ্য আসনের বিপরীতে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী পাস করলেও দুশ্চিন্তা যেন কাটছে না।

পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বৃদ্ধি এ দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ এর ফলে প্রথম সারির উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে মেধাবীদের ভর্তিযুদ্ধের লড়াই আরও কঠিন হবে। তাই পাস করা শিক্ষার্থীর চেয়ে প্রায় ১৩ লাখ বেশি ভর্তিযোগ্য আসন থাকলেও তা স্বস্তির কারণ হতে পারছে না।

এ অবস্থায় মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষাবিদরা।

সরকার ইতিমধ্যে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময়সূচি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে। ১৩ মে থেকে কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এবার মোট তিন দফায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হবে। ফল প্রকাশও হবে তিনবার।

প্রথম দফায় ২৪ মে পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এছাড়া ১৯ ও ২০ জুন দ্বিতীয় এবং ২৪ জুন তৃতীয়বারের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদনের পর কলেজ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে শিক্ষার্থীর কলেজ-মাদ্রাসায় বরাদ্দকৃত আসনের পাশাপাশি আবেদনটিও বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পরেরবার আবেদন করতে হবে।

এবারের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে। এ বছর ১০ শিক্ষা বোর্ডে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

অন্যদিকে এবার গতবারের চেয়ে জিপিএ-৫ বেড়েছে। এবার মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ শিক্ষার্থী। গতবার পেয়েছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। ১০ বোর্ডে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জনের মধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২৮ হাজার ৫৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।


উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সাড়ে ৮ হাজারের মতো কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ২৯ লাখের মতো। যার মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র পৌনে ২শ’।

এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। অথচ এবার শুধু জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। সেই হিসাবে সর্বোচ্চ ফলাফল করেও অর্থাৎ জিপিএ-৫ পেয়েও প্রায় অর্ধলাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এসব কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না।

ব্যানবেইসের হিসাবে, দেশে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে রয়েছে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে ৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি। এসব কলেজে নিজ নিজ বিভাগের জিপিএ-৫ ধারীরাও ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না।

এর বাইরে গ্রামের স্কুলগুলোর যেসব শিক্ষার্থী কম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জিপিএ-৫ না পেলেও, মাঝারি মানের ফলাফল নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের জন্যও নেই কোনো সুখবর। কারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্তদেরই যেখানে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেয়া যাচ্ছে না, সেখানে জিপিএ-৪ কিংবা তার চেয়ে বেশি পাওয়া ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬১৭ জনের ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কোনো সুযোগ থাকবে না।

আর জিপিএ-৪ এর কম পাওয়া ৯ লাখ ৭১ হাজার ৮৫৮ জনকে ভর্তি হতে হবে কম মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। তারা চাইলেও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। প্রতি বছরই দেখা যায়, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভাগীয় বড় কলেজে ভিড় করে।

কিন্তু শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরই সুযোগ করে দেয়ার মতো প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও দেশের বড় শহরগুলোয় নেই। এছাড়া রাজধানী ঢাকাতে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্য আসন রয়েছে ৪৩ হাজারের মতো। এর মধ্যে ভালোমানের ২০-২২টি কলেজে আসন রয়েছে ২০ হাজারের মতো।

বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২০১ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৫ জন।

আবার জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর মধ্যে পেয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭১০ জন। সেই হিসাবে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ফলে ভালো ফলের পর উচ্চমাধ্যমিকে রাজধানীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি থাকবে।

তবে এসব দুশ্চিন্তার মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে নির্ধারিত আসনের শতভাগেই মেধায় ভর্তির সিদ্ধান্তে। এবার কোটার আসনের শিক্ষার্থীদের কলেজের মোট আসনের ১১ শতাংশ আলাদাভাবে ভর্তি করা হবে। এরা অতিরিক্ত শিক্ষার্থী হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাদের আসনের অনুমোদন শিক্ষা বোর্ডগুলো নতুন করে দেবে।

 


Comments