প্রতি বছর বোর্ড পরীক্ষায় ফল খারাপ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সেই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় আত্মহত্যা করে থাকে অনেক শিক্ষার্থী।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কিশোরী বলে জানা গেছে।
তাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে পরীক্ষায় ফেল করা কিংবা আশানুরূপ ফল না করাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার কারণে কেন বাড়ছে আত্মহত্যা?
সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উচ্চাভিলাষ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে।
আসুন জেনে নেই কেন বাড়ছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা। এছাড়া আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে করণীয়।
প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনা
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইদানীং পড়ালেখা ও ফলাফল নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পড়াশোনা এখন পরিণত হয়েছে অস্থির সামাজিক প্রতিযোগিতায়। যেখানে মা-বাবা সন্তানের পরীক্ষার ফলকে সামাজিক সম্মান রক্ষার হাতিয়ার বলে মনে করেন।
ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চাভিলাষ
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বাড়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে উচ্চাভিলাষ। অভিভাবকদের এই অতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চাভিলাষের কারণেই বোর্ড পরীক্ষায় পাস না করায় কিশোর-কিশোরীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
হতাশা ও অবসাদ
বয়ঃসন্ধিকালের এই সময় কিশোর-কিশোরীদের প্রতিনিয়ত পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দেয়ার ফলে তাদের মধ্যে হতাশা অবসাদের মতো জটিল মানসিক টানাপড়েন শুরু হয়। শুধু পাঠ্যবইয়ের চাপে না রেখে সৃজনশীল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা উচিত।
কিশোরীদের আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে করণীয়
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার জগৎ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা, অনুপ্রেরণামূলক গল্প প্রচারের পাশাপাশি আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
পরিবারের সহযোগিতা
পরিবারের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পারে কিশোরীদের আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে। ফল খারাপ করা পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বিরূপ আচরণের পরিবর্তে তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপার উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
খেলাধুলা, গান, ছবি আঁকা
ভালো ফলাফলের চেয়ে ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে এবং কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুলা, গান, ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল দিকগুলো বিকাশে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করতে হবে।
স্কুলে শিক্ষাবিষয়ক মনোবিদ নিয়োগ
সচেতনতা তৈরিতে সরকারি নির্দেশে সব স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে একজন করে শিক্ষাবিষয়ক মনোবিদ নিয়োগের তাগিদ দেন সরকার। শিশু-কিশোররা কেমন পরিবেশে বেড়ে উঠছে তা জানতে এবং তাদের মানসিক বিকাশে কী করা প্রয়োজন সে বিষয়ে জানাতে অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা