অভিজাত ও নামিদামি শপিংমলে চাকরি নিয়ে এটিএম কার্ড জালিয়াতি করেছেন শরিফুল ইসলাম। কোটিপতি গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করে এবং ক্লোন এটিএম কার্ড তৈরি করে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করতেন তিনি।

এভাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন প্রতারক শরিফ। সিটি ব্যাংকের একটি মামলা তদন্তে নেমে তার কার্ড জালিয়াতির তথ্য পায় পুলিশ।

তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য বেরিয়ে আসে।

মেহেরপুর জেলার গাংনী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে শরিফ রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেন।

পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার সময় ইভানোভিচ নামে এক রুশ তরুণের কাছে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির কৌশল রপ্ত করেন তিনি।

এরপর দেশে ফিরে এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে বিলাসী জীবন-যাপন, দামি ব্রান্ডের গাড়ি আর বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ব্যবহার করত শরিফ।

মামলার তদন্ত সংস্থা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও ১৬৪ ধারায় আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৪ মে শরিফের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডি।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জালিয়াতির টার্গেট নিয়ে শরিফ স্বপ্ন শপে চাকরি নেয়।

সিআইডি সূত্র জানায়, ২৮ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় শরিফ।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গ্রাহকের তথ্য চুরি করে তিনি শতাধিক এটিএম কার্ড ক্লোন করেন। এরপর এসব কার্ড দিয়ে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করার কথা জানান তিনি।

২০১৩ সালে চট্টগ্রামে কার্ড জালিয়াতি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে ১৮ মাস জেলও খেটেছেন শরিফ (৩৩)।

এরপর পরিচয় গোপন করে বনানীর স্বপ্ন সুপার শপে চাকরি নেন তিনি। সেখান থেকে তথ্য চুরি করে বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক কার্ড ক্লোন করে টাকা উত্তোলন শুরু করেন। পাঁচটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে ৩০ লাখ টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন শরিফ।

এই টাকা দিয়ে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি কেনেন তিনি। আদালত সূত্র জানায়, ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা রয়েছে এমন কোনো কার্ড শরিফ ক্লোন করতেন না।

যেসব গ্রাহকের এটিএম কার্ডে কোটি টাকা রয়েছে, তাদের টার্গেট করতেন তিনি। সিআইডি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৭ জুন বনানীর স্বপ্ন সুপার শপ শাখায় চাকরি নেন শরিফ।

২০ জুলাই তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে চলে যান শরিফ। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে আবার চাকরিতে যোগ দেন তিনি।

স্বপ্ন সুপার শপে গ্রাহক যখন পিন নম্বর দিত তখন কৌশলে পিন নম্বর লিখে রাখত শরিফ।

এরপর বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ ও ইলেকট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করতেন তিনি। এরপর এটিএম বুথ থেকে তিনি টাকা তুলে নিতেন।

বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে ধরা না পড়েন এজন্য তিনি পরচুলা ও চশমা ব্যবহার করতেন।

 


Comments