আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে বেশকিছু প্রণোদনা আসছে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর কমানো এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেনের ওপর কর কমানো হচ্ছে।

অন্যদিকে গত কয়েক বছর বাজেটে যেসব প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তার সুফল নেই শেয়ারবাজারে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও বাজার নিস্তেজ।

প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। ফলে কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন, যা পুরো বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ মুহূর্তে বাজারে নতুন বিনিয়োগ দরকার। ফলে এমন প্রণোদনা দিতে হবে, যা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। না হলে বিনিয়োগকারীরা এর সুফল পাবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  বলেন, বাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। এ সংকট কাটাতে এমন প্রণোদনা দিতে হবে, যার সুবিধা সরাসরি বিনিয়োগকারীরা পান। তিনি বলেন, লভ্যাংশের ওপর কর কমানো উচিত।

কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রতিবছর যে টাকা মুনাফা করে, তার ওপর তারা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কর্পোরেট কর দেয়। আবার কর পরিশোধের পরই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়। ফলে একই আয়ের ওপর দুইবার কর নেয়া উচিত নয়।

তার মতে, কর্পোরেট কর কিছুটা কমানো উচিত। তিনি বলেন, আগে যেসব প্রণোদনা দেয়া হয়েছে তার কতটা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তা বিবেচনা করতে হবে।

জানা গেছে, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করার দাবি করেছে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বাজেট আলোচনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কর্মকর্তারা এসব প্রস্তাব দেন।

বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। বিদ্যমান নিয়মে ডিমিউচুয়াইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ বছর ধাপে ধাপে কর অব্যাহত দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে প্রথম বছর শতভাগ কর মুক্ত, দ্বিতীয় বছর ৮০ শতাংশ, তৃতীয় বছর ৬০ শতাংশ, চতুর্থ বছর ৪০ শতাংশ এবং পঞ্চম বছরে ২০ শতাংশ কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ বছর পার হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবে আরও এক বছর শতভাগ কর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে সরকার। এছাড়া বর্তমান নিয়মে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের শেয়ার লেনদেনের জন্য শেয়ারমূল্যের ওপর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। অর্থাৎ কোনো মেম্বার এক লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করলে ৫০ টাকা কর দিতে হয়। ডিএসইর প্রস্তাবে এ সীমা দশমিক শূন্য ১৫ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব কার্যকর করা হলে হাউসগুলোকে ১ লাখ টাকা লেনদেনের বিপরীতে ১৫ টাকা কর দিতে হবে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর শেয়ার হস্তান্তরের জন্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ স্ট্যাম্প শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়াও ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী (বিদেশি অংশীদার) হিসেবে ইতিমধ্যে চীনের সাংহাই এবং শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ১২ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২২ টাকা নেয়া হচ্ছে। এতে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয় হবে। এ টাকা থেকে প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে কর মওকুফ চেয়েছে ডিএসই। তবে এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না সরকার।

বিগত দিনের প্রণোদনা :

স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর ৫ বছর কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করের হার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কোম্পানির কর হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হতে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ পেলে তার জন্য কোনো কর দিতে হয় না।

এছাড়া কোনো কোম্পানি বা অংশীদারী ফার্ম পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ হতে যে টাকা মুনাফা করে, তার ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করলে উৎসে কর দিতে হবে না।

তবে এসব প্রণোদনার পরও বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত তিন বছরে বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। এর ফলে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

 


Comments