এই পৃথিবীতে সবচেয়ে লম্বা রোজা রাখছেন আইসল্যান্ডের অধিবাসীরা। চব্বিশ ঘণ্টা দিনের মাত্র দুই ঘণ্টার পানাহার এবং সেহরির কাজ সারতে হচ্ছে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে তারা কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন?
আসলে সেখানে অনেক আগে সূর্যোদ্বয় হয়, আর অনেক পরে অস্ত যায়। বিবিসি এক ভিডিও-তে জানাচ্ছে সেই মানুষগুলোর কথা, যারা দিনে ২২ ঘণ্টার রোজা পালন করছেন।
ভিডিও প্রতিবেদনে বিবিসি জানাচ্ছে, এই মুসলমানরা দিনের পুরোটা সময়ই পানাহার ছাড়া কাটিয়ে দিচ্ছেন। একজন বলছেন, আপনি যখন কিছু বিশ্বাস করছেন তখন তার জন্যে যেকোনো কিছু করতে পারেন।
এটা আমার বিশ্বাস যা আমাকে এগিয়ে নিতে থাকে, তখন তা অনেক সহজ হয়ে যায়, বললেন আরেকজন।
আইসল্যান্ডের মুসলমানরা দীর্ঘতম রোজা পালন করে। তা ছাড়া বছরের এই সময়টাতে সেখানকার দিনগুলোও সবচেয়ে বড় হয়। অনেক লম্বা দিন। রাত ১১টার দিকে সূর্য মাত্র ডোবে। আর উদয় হয় ভোর ৪টার দিকে। রাতে মাত্র ২ ঘণ্টা সময় থাকে খাওয়ার জন্যে।
বছর পাঁচেক আগে পাকিস্তান থেকে আইসল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছেন সুলামান। গভীর রাতে একবাটি দই আর ফলের পর সূর্যদ্বয়ের আগ পর্যন্ত তিনি কিছুই খান না। বিগত ২২ বছর ধরে আমি রমজান মাসে রোজা রাখি।
ভোরের একটু আগ থেকে সূর্যদ্বয়ের মধ্যে হাতে কিছুটা সময় থাকে। আসলে এটা এখন প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সুলামানকে রাতে খাওয়ার পরের ৫ ঘণ্টার মধ্যেই কাজের জন্যে ছুটতে হবে।
ধারণা করা হয়, আইসল্যান্ডে এক হাজারের বেশি মুসলমান বাস করেন। তবে তাদের সবাই দীর্ঘতম রোজা পালন করেন না।
রেইকজাভিকের এক ছোট্ট মুসলমান কমিউনিটিতে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন মানসুর। এক ধর্মীয় সভার মাধ্যমে তারা রোজা ১৮ ঘণ্টা করেছেন, করণ সূর্য সেখানে অনেক পরে অস্ত যায়।
কুরআনের আলোকে তারা সভার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে তাদের রোজা ৪ ঘণ্টা কমিয়ে এনেছেন, তবুও তা ১৮ ঘণ্টার রোজা। এত সময় ধরে রোজা রাখার কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আইসল্যান্ডে যে মুসলমানরা রোজা রাখছেন, তাদের সবাই দীর্ঘতম রোজার অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন।
রেইকজাভিকে একটি কাবাবের শপ পরিচালনা করেন ইয়ামান। কাবাব তিনি তৈরি করেন, কিন্তু স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন না। ক্ষুধা নিয়ে কাবারের দোকানে দায়িত্বপালন খুব কঠিন কাজ, অবশ্যই ক্ষুধা লাগে।
সুলামান এবং তার স্ত্রী জারা অফিস থেকে ফিরে ঘরের কাজ করেন। তার স্ত্রী গর্ভবতী, তাই তিনি রোজা রাখেন না। তবে সুলামান রাখছেন নিয়মিত। স্ত্রী রোজা না রাখলেও নিয়মিত নামাজ পড়েন। পবিত্র রমজান মাসের মাহাত্ম্য উবলব্ধির জন্যেই ধর্ম-কর্ম যথাসাধ্যভাবে পালন করছেন তিনি।
আইসল্যান্ডে সূর্যাস্তের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই।
এরপর হাতে আর সময় বেশি থাকে না। একটু পরই তো সেহরি। আগামী দিন ২২ ঘণ্টাই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে তাদের।