নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন্ন বাজেটে মেগা বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা খাত। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। চলতি বাজেটের তুলনায় তা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
সরকারের অগ্রাধিকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শিক্ষার অবস্থান এবার চতুর্থ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হলেও শিক্ষার মানোন্নয়নে দৃশ্যমান বরাদ্দের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্বাচনী বছরে সরকার প্রত্যেক এমপিকে ১০টি স্কুল, ৬টি মাদরাসার ভবন নির্মাণ, ১০টি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক এমপিকে এ ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকায় দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটে বরাদ্দের হিসেবে চতুর্থ অবস্থানে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। এ বিভাগে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
এ বিভাগের জন্য অনুন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা এবং উন্নয়নের জন্য ৬ হাজার ৬৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। চলতি বছরে বরাদ্দ আছে প্রায় ২৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে এ বিভাগে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ৩৩৫ কোটি টাকা।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য মোট ৫ হাজার ৭৯৮ কোটি ২ লাখ টাকা বাজেট থাকছে। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৪ হাজার ৮৭০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ধরা হবে।
অন্যদিকে বরাদ্দে অগ্রাধিকার দশ মন্ত্রণালয়ের ৬ষ্ঠ অবস্থানে আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আসন্ন বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ ২২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ২২ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৬৫ কোটি টাকা।
দুই মন্ত্রণালয় মিলে চলতি বাজেটে প্রায় ১ হাজার কোটি বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চলতি বছরে একনেকে পাস হওয়ার মেগা প্রকল্পের জন্য আগামী দুই বছরে বাজেট বাড়তে থাকবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ হাজার ৮৩১ কোটি এবং পরের বছর ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ৯ বছর ধরে আটকে থাকা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। তবে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে এমন শোনা গেলেও কত বরাদ্দ তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, কত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে তার দেখভাল করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সে তালিকা এখনো অর্থ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে না পৌঁছানোর কারণে এ খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমপিওভুক্তি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার পর অর্থের বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে। প্রয়োজনে থোক বরাদ্দ থেকে দেয়া হবে।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে এমপিও ঘোষণা দেয়া হবে। এমন ঘোষণা আসলে নতুন করে এ খাতে ব্যয় বাড়বে। তবে এমপিও দেয়া হলে এক্ষেত্রে নানা ধরনের শর্ত থাকবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিদ সাংবাদিকদের বলেছেন।
শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে (ইইডি)। এ দপ্তরের জন্য আসন্ন বাজেটে ১৬১২ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরে দুই অর্থবছরে এ দপ্তরের বরাদ্দ ধরা হয়েছে যথাক্রমে ১১০০ কোটি ৮৫ লাখ এবং ১২০০ কোটি ৫ লাখ টাকা। এখানে বরাদ্দ বাড়ার ব্যাখ্যা দিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালা।
তিনি বলেন, শিক্ষার অবকাঠামোর উন্নয়নে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে। একনেকে পাস হওয়া দুটি প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুটি প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের সরকারি অর্ডার (জিও) হয়েছে। চলতি মাসে সারা দেশে শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নের বিপ্লব হিসেবে খ্যাত এ প্রকল্পের দরপত্র দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও প্রত্যেক এমপির জন্য আরো ৭টি নতুন মাদরাসা নির্মাণের জন্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রেখে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে একনেকে। খুব শিগগিরই এটি পাস হলে আরো বরাদ্দ বেড়ে যাবে।